মায়ের মরদেহের পাশেই আটকে ছিল দুই বোন

তুরস্ক ও সিরিয়ায় শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে, সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। তবুও উদ্ধারকর্মীরা আশা ছাড়ছেন না। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে খুঁজে বেড়াচ্ছেন প্রাণের স্পন্দন। কোনোভাবে কাউকে জীবিত উদ্ধার করতে পারলে হাসছেন বিজয়ীর হাসি। গতকালও ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে উদ্ধার করা হয় দুই বোনকে। পরে তারা নিজেদের প্রশ্ন করে, সত্যিই কি বেঁচে আছি? খবর বিবিসি।

মার্ভকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে

স্বজনদের কাছে খবর পেয়ে উদ্ধারকর্মীরা গতকাল হাজির হয়েছিলেন দক্ষিণ তুরস্কের আনতাকিয়ার একটি পাঁচতলা অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের ধ্বংসস্তূপের কাছে। জানা গেছে, সেখানে পরিবারের অন্যদের সাথে চাপা পড়ে আছে ২৪ বছর বয়সী মার্ভ এবং তার বোন ১৯ বছরের ইরেম।

উদ্ধারকর্মীরা সেখানে পৌঁছে দুই বোনের নাম ধরে ডাকতে থাকেন। দুই বোনও এক সময় সাড়া দেয়। তাদেরকে আশ্বস্ত করেন উদ্ধারকর্মীরা। জানায়, কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদেরকে উদ্ধার করা হবে। বিশাল সেই ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করা কঠিন হবে, এটা উদ্ধারকর্মীদের অজানা ছিল না। কিন্তু দীর্ঘ এক সপ্তাহ ধরে আটকে থাকা দুই তরুণীর মনোবল চাঙা রাখাও কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। উদ্ধারকর্মীদের এ আশ্বাসে দুই বোন হাসতে শুরু করে।

তুরস্কের একটি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা

উদ্ধারকর্মীদের হিসেব অনুযায়ী দুই বোনের কাছে পৌঁছাতে দুই মিটার পরিমাণ জায়গা খোঁড়ার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সামান্য ভুল হলেও বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে। তাই রাবিশ যাতে ধসে না পড়ে সেটা নিশ্চিত করার জন্য বুলডোজার আনা হয়।

উদ্ধারকাজ চালাতে চালাতে উদ্ধারকর্মী মুস্তফা তাদের জানান, তোমাদেরকে আমরা শীঘ্রই কম্বল দেব। তখন তারা জানায়, তাদের নিয়ে চিন্তা করার কোনো কারণ নেই। আর তারা ক্লান্ত বা শীতার্তও নয়। বরং মার্ভ তখন বাইরে থাকা উদ্ধারকর্মীদের অবস্থা নিয়ে দুঃশ্চিন্তার কথা জানায়।

উদ্ধারকর্মীরা দ্রুত কাজ চালাতে থাকলেও এরই মধ্যে কয়েক ঘণ্টা পার হয়ে যায়। এরই মধ্যে আবারও ভূমিকম্প অনুভূত হলে উদ্ধারকাজ বন্ধ করে সরে যেতে বাধ্য হয় তারা। আধা ঘণ্টা পরে তারা গিয়ে আবারও কাজ শুরু করেন। আটকে পড়া দুই বোনকে আশ্বস্ত করেন, ভয় পেও না। তোমাদের ফেলে আমরা চলে যাবো না।

খননকাজ কিছুটা এগোলে উদ্ধারকর্মীরা ভেতরে ক্যামেরা প্রবেশ করান। সেটি দিয়ে তারা ভেতরের অবস্থা জানতে পারে।

কোনোমতো হামাগুড়ি দিয়ে প্রবেশ করা যায় এমন একটি গর্ত করে দুই বোনের কাছাকাছি জায়গায় চলে যায় উদ্ধারকর্মীরা। তখন তারা জানায়, তাদের নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। কারণ তাদের মায়ের মরদেহের পাশেই তারা কয়েকটি দিন কাটিয়েছেন। ফলে বাতাস ধীরে ধীরে দূষিত হতে শুরু করছে।

পরে অনেক কষ্টের পর একে একে তাদের দুই বোনকেই অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়। এ সময় তারা জানতে চায়, আমরা কি সত্যিই বেঁচে আছি? তখন উদ্ধারকর্মী ও ইরেম-মার্ভদের স্বজন-বন্ধুরা জানায়, হ্যাঁ, তোমরা বেঁচে আছো। আর আমরা তোমাদের পাশে আছি। তোমরা ভয় পেও না। পরে তাদেরকে কাছাকাছি একটি ফিল্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

উদ্ধারকর্মীরা জানান, অনেক কষ্টের পরও একজন মানুষকে জীবিত উদ্ধার করতে পারার অনুভূতিটা অসম্ভব সুন্দর। আমরা চাই, একটি মানুষও যেন মারা না যায়।