দেশের অনেক জেলায় তাপমাত্রা প্রতিদিনই ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে উঠছে। এ অবস্থায় দিনের বেলায় বাইরে বেরোলে হিটস্ট্রোকের প্রবল ঝুঁকি রয়েছে। হিটস্ট্রোক হচ্ছে মেডিকেল ইমার্জেন্সি, যখন অতি দ্রুত বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবা না পেলে আক্রান্তের মৃত্যু হতে পারে। এই গরমে হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচতে করণীয় সংক্রান্ত পরামর্শ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অস্টিনের পালমোনারি ক্রিটিকাল কেয়ার বিভাগের অধ্যাপক ডা. রুমি আহমেদ খান।

hot weather photo newহিটস্ট্রোকে আক্রান্তের দেহের তাপমাত্রা দ্রুত কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে

ডা. খান জানান, গরমে বেশিক্ষণ বাইরে থাকলে দেহের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। এ অবস্থায় তাপমাত্রা কমাতে মানবদেহের সিস্টেমগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করে। এক্ষেত্রে প্রধান পদ্ধতি হচ্ছে ঘাম তৈরি করে। দেহের উপরিভাগে বেরিয়ে আসা ঘাম শুকিয়ে বাতাসে মিশে গেলে তাপ কমতে থাকে।

তবে এই ঘামের মাধ্যমে তাপমাত্রা কমানোর একটা সীমাবদ্ধতা আছে। বাতাসের আর্দ্রতা ৭৫ শতাংশের বেশি হলে এ পদ্ধতি তেমন কাজ করে না। গতকাল শনিবার ঢাকায় আর্দ্রতা ছিল ৭৮ শতাংশ, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে দেহের তাপ কমানোর জন্য সহায়ক নয়।

শিশু, বয়স্ক, গর্ভবতী, অতিরিক্ত কৃষকায় ও মোটা যারা, তারাই হিটস্ট্রোকের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। এ অবস্থায় হিটস্ট্রোক এড়ানোর পরামর্শের অংশ হিসেবে অতিরিক্ত গরমে দেহের কি কি সমস্যা হতে পারে সেগুলো ধাপে ধাপে ব্যাখ্যা করেছেন ডা. রুমি আহমেদ খান।

অতিরিক্ত গরমে প্রথম ধাপে যা হয় তা হচ্ছে হিট ক্র্যাম্প। অতিরিক্ত ঘাম বেরোনোর ফলে শরীরে লবন ও পানির অভাব হয়। এর প্রভাবে মাংসপেশী, বিশেষত পায়ের পেশীতে ক্র্যাম্প বা কামড়ানো শুরু হতে পারে।

হিট ক্র্যাম্পের পরের ধাপ হচ্ছে হিট এক্সহশন। কয়েক দিন ধরে অল্প অল্প সময় নিয়ে অতিরিক্ত তাপে থাকার প্রভাবে হিট এক্সহশন শুরু হতে পারে। অতিরিক্ত ঘাম, দুর্বলতা, মাথা ধরা, মাথা ব্যথা, বমিবমি ভাব ও মুর্চ্ছা যাওয়ার প্রবণতা হলো হিট এক্সহশনের লক্ষণ। হিট এক্সহশনের এক পর্যায়ে শ্বাস প্রশ্বাস ও হার্ট রেট দ্রুত হতে শুরু করে।

হিট এক্সহশন শুরু হলে প্রথমেই রোগীকে ছায়ায় নিয়ে যেতে হবে। এরপর রিহাইড্রেশন, অর্থাৎ শরীরে পানি ও তরল প্রবেশ করাতে হবে। ওরস্যালাইন খাওয়ালে সবচেয়ে ভালো। না হয় ঠান্ডা পানি খাওয়াতে হবে। আশেপাশে পুকুর বা বাথটাব থাকলে গলা পর্যন্ত পুকুরের পানিতে নামিয়ে দিন। বাথটাবে শোয়ালে পানির মধ্যে কিছু বরফ ঢেলে দিন।

বাথটাব বা পুকুর না থাকলে রোগীকে ঠান্ডা পানিতে গোসল করিয়ে টেবিল ফ্যান চালিয়ে শরীর শুকিয়ে দিতে হবে। দেহের তাপ না কমলে আবারও ঠান্ডা পানিতে গোসল করিয়ে খুব জোরে ফ্যান চালিয়ে শরীর শুকিয়ে নিতে হবে।

হিট এক্সহশনের সঠিক চিকিৎসা না হলে অথবা হিট এক্সহশন শনাক্ত করতে না পারলে হিটস্ট্রোক হয়ে যাবার ঝুঁকি থাকে। আক্রান্ত ব্যক্তির দেহের চামড়া লাল হয়ে গেলে, ঘাম না হলে, পালস বেড়ে গেলে, রোগী কোনো কথা না বললে অথবা অজ্ঞান হতে থাকলে হিটস্ট্রোক হয়েছে বলে সন্দেহ করা যায়।

ডা, খান জানিয়েছেন, হিটস্ট্রোকের পরের ধাপে দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ফেইল করতে থাকে। প্রথমে ব্রেইনের নিউরন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এরপর যকৃত ও রক্তনালীর কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকবে। একপর্যায়ে সব অর্গান ফেইল করতে পারে।

হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হলে রোগীকে ওপরে বর্ণিত রিহাইড্রেশন ও গোসল করানোর ব্যবস্থা তো নিতে হবেই, সেই সঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব আইসিইউ আছে এমন হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। যেহেতু এই গরমে আইসিইউ ও হাসপাতালে পৌঁছানো অনেকের জন্য কষ্টসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার, তাই রোগীর দেহে ঠান্ডা স্যালাইন সঞ্চালন করা যায়। স্থানীয় ওষুধের দোকানগুলো এমন জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় কিছু স্যালাইনের ব্যাগ ফ্রিজে (ডিপ ফ্রিজে নয় কিন্তু) রাখতে পারে।

মনে রাখতে হবে, হিট এক্সহশন বা হিটস্ট্রোক পর্যায়ে পৌঁছা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এজন্য নিতান্ত প্রয়োজন না হলে গরমে বাইরে বেরোনো পরিহার করতে হবে। বেরোতে হলে হাল্কা পাতলা জামাকাপড় পরতে হবে। সঙ্গে রাখতে হবে ঠান্ডা পানির বোতল। কিছুক্ষণ পরপর পানি খেতে হবে, না হয় পানি দিয়ে বারবার চোখ মুখ ভিজিয়ে নিতে হবে।

Get the latest news on lifestyle, health, food, and more from our team of expert writers. From fitness tips and nutrition advice to travel guides and entertainment news, we cover the topics that matter most to you. Whether you're looking to improve your health, broaden your horizons, or just stay up-to-date with the latest trends, you'll find everything you need here.