তাইওয়ানে দুই শতাধিক সৈন্য পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র

তাইওয়ানে দুই শতাধিক সৈন্য পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন বাহিনীর ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ড থেকে পাঠানো এসব সৈন্য চীনা সশস্ত্র বাহিনীর (পিএলএ) কৌশল মোকাবেলার বিষয়ে তাইওয়ানি সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেবে বলে সামরিক সূত্রগুলো জানিয়েছে। তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের সঙ্গে উত্তেজনা বৃদ্ধির মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র এ পদক্ষেপ নিলো।

তাইওয়ানে পৌঁছেছেন যুক্তরাষ্ট্রের একদল সামরিক প্রশিক্ষক

জানা গেছে, তাইওয়ানে পাঠানো সৈন্যদের ৮০ শতাংশই মার্কিন সেনাবাহিনী থেকে এসেছেন। এদের বেশিরভাগকেই তাইওয়ান সেনাবাহিনীর কয়েকটি নতুন ট্রেনিং সেন্টার ও রিজার্ভ ব্রিগেডে মোতায়েন করা হয়েছে। এরা সংশ্লিষ্ট সেনাদল ও রিজার্ভ ব্রিগেডকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি মানোন্নয়নে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবেন।

এর আগে ফেব্রুয়ারি মাসে মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাতে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়, কয়েক মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানে ১০০ থেকে ২০০ সৈন্য পাঠাবে। এক বছর আগে পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে মার্কিন সামরিক প্রশিক্ষকের সংখ্যা ছিল ৩০ জন।

সূত্র জানায়, দুই শতাধিক মার্কিন সৈন্য রোববারের আগেই তাইওয়ানে পৌঁছেছেন। এরইমধ্যে তারা তাইওয়ান সেনাবাহিনীর ট্রেনিং সেন্টার ও রিজার্ভ ব্রিগেডে সংযুক্ত হয়েছেন। মার্কিন সৈন্যরা তাইওয়ানি ইউনিটগুলোর তাৎক্ষণিক মূল্যায়ন করবেন এবং দক্ষতা উন্নয়নের বিষয়ে সুপারিশ করবেন।

আগামী বছর থেকে তাইওয়ান সব নাগরিকের জন্য এক বছরের বাধ্যতামূলক সামরিক দায়িত্বের আইন বলবত করবে। মার্কিন প্রশিক্ষকরা এখন পিএলএর মোকাবেলার জন্য যে ধরণের প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দেবেন, আগামী বছর থেকে রিজার্ভ সৈন্যদের জন্যও তাইওয়ান একই প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ করবে।

এর আগে তাইওয়ানের বিমান বাহিনীর পাইলট ও সদস্যরা মার্কিন প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। অ্যারিজোনার মেরিকোপা কাউন্টিতে অবস্থিত লুক বিমান ঘাঁটিতে বহু বছর তাইওয়ানি বিমান বাহিনী সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

একইভাবে, তাইওয়ানের নৌবাহিনী সদস্যরাও মার্কিন নৌবাহিনীর সঙ্গে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। তাইওয়ান নৌবাহিনীর দুনমু নৌ বহর প্রায়ই কয়েক সপ্তাহব্যাপী শুভেচ্ছা সফরে বের হয় এবং মার্কিন নৌযানের সঙ্গে যৌথ মহড়া ও প্রশিক্ষণে অংশ নেয়।

তাইওয়ানের নৌ ও বিমান বাহিনী আগেই মার্কিন প্রশিক্ষণ পাওয়ায় এবার যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো দুই শতাধিক সৈন্যর মধ্যে মার্কিন নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর কেবল ২০ শতাংশ সদস্য রাখা হয়েছে। বাকি ৮০ শতাংশই মার্কিন সেনাবাহিনীর সদস্য।

কর্মকর্তারা জানান, তাইওয়ানের সেনাবাহিনীতে যে স্পেশাল অপারেশনস ট্রুপ রয়েছে, তারাও মার্কিন প্রশিক্ষকের কাছে তালিম পেয়েছেন। তারপরও তাইওয়ান সেনাবাহিনীর তৃণমূল পর্যায়ে ও কমব্যাট ট্যাকটিকস প্রশিক্ষণে ঘাটতি রয়ে গেছে বলে মার্কিন সেনাবাহিনী মনে করছে। এ কারণে মার্কিন ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ড থেকে নতুন দলটি পাঠানো হয়েছে।

নতুন পাঠানো মার্কিন সৈন্যদলের মধ্যে যুদ্ধের অভিজ্ঞতা রয়েছে ১৬০ জনের। এদের সবাই নন-কমিশনড কর্মকর্তা। তাইওয়ান সেনাবাহিনীর কমব্যাট ইউনিট ও ট্রেনিং সেন্টারে এরা থাকবেন।

চলতি মাসের গোড়ার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের একদল সামরিক প্রশিক্ষক তাইওয়ানের হুয়ালিয়েন কাউন্টিতে অবস্থিত চাইশান বিমান ঘাঁটি পরিদর্শন করেন। দলের সদস্যরা ওই ঘাঁটির বাঙ্কারগুলোর নিরাপত্তা পুনঃপরীক্ষা করেন। সবকটি বাঙ্কার বিস্ফোরণ ঠেকাতে সক্ষম কিনা এবং সেগুলোতে পর্যাপ্ত সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হয়।

মার্কিন প্রশিক্ষকরা তাইওয়ানের যুদ্ধবিমান ও গোলাবারুদ মজুতের জায়গাগুলো পরীক্ষা করেছেন। বিস্ফোরক ও যুদ্ধবিমান রাখার জায়গাগুলো স্যাটেলাইট থেকে শনাক্ত করা যায় কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হয়েছে। সম্ভাব্য চীনা হামলার মুখে বিমান ঘাঁটির ক্ষয়ক্ষতি কমাতে কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।