বাংলা বর্ণ চেনে না তৃতীয় চতুর্থ শ্রেণির বহু শিক্ষার্থী, পারে না যোগ ও ভাগ

বাংলা বর্ণ ও সংখ্যা চেনে না তৃতীয় শ্রেণির অনেক শিক্ষার্থী। ১৩ শতাংশ শিক্ষার্থী কোনো সংখ্যাই চেনে না। জটিল বাক্য ও শব্দ পড়তে পারে না তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির অর্ধেক শিক্ষার্থী। এ দুই শ্রেণিতে অধ্যয়নরতদের এক-তৃতীয়াংশই পুরো একটি লেখা পড়তে পারে না। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) এক গবেষণায় প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার এমন বেহাল চিত্র উঠে এসেছে।

কোভিডের জেরে প্রাথমিক শিক্ষার বেহাল চিত্র উঠে এসেছে গবেষণায়, প্রতীকী ছবি

‘হোয়্যার ডু উই স্ট্যান্ড আফটার অলমোস্ট টু ইয়ার্স অব স্কুল ক্লোজার ডিউ ট কোভিড-১৯: এসেসমেন্ট অব লার্নিং অব প্রাইমারি স্কুল স্টুডেন্টস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি চলতি সপ্তাহে বিআইডিএস রিসার্চ অ্যালামানাকে প্রকাশ হয়েছে।

কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে দুই বছর স্কুল বন্ধ থাকা ও অটোপাসের প্রেক্ষিতে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার বর্তমান অবস্থা জানতে দেশের গ্রাম, শহর, চর, উপকূলীয় ও পাহাড়ি এলাকার ৩৩৯টি উপজেলার ১ হাজার ৬৪৪টি স্কুলকে দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে বাছাই করা হয়। একইভাবে এসব স্কুল থেকে ৬২ হাজার ৭০৩ জন শিক্ষার্থীকে নির্বাচন করে বাংলা ও গণিতে তাদের দক্ষতা যাচাই করা হয়।

গবেষণার ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন বলেন, ৬৪ জেলার ৬২ হাজার শিক্ষার্থীর ওপর জরিপ চালানো হয়। এতে দেখা গেছে, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থীই জটিল বাক্য ও শব্দ পড়তে পারে না। এটা আমাদের শিক্ষার সংকটকে নির্দেশ করে।

পাঠক্রম অনুযায়ী প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়েই একজন শিক্ষার্থী বাংলা বর্ণমালার সবকটি অক্ষর ও গণিতের ১ থেকে ২০ পর্যন্ত শিখে ফেলার কথা থাকলেও গবেষণায় দেখা যায়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে উঠেও বহু শিক্ষার্থীর এসব ক্ষেত্রে দুর্বলতা রয়ে গেছে।

গবেষণা দলের সদস্যরা জানান, শ্রেণীর ধরন ও পাঠক্রম অনুযায়ী যেসব শেখানো হয় তার ওপর ভিত্তি করে প্রশ্নপত্রের ১০টি সেট তৈরি করা হয়। এর মধ্যে বাংলা ও গণিতের আটটি করে প্রশ্ন করা হয়। আটটি প্রশ্নের কোনো কোনোটিতে একাধিক প্রশ্ন রাখা হয়।

সহজ ও কঠিন শব্দ পড়ার দক্ষতা যাচাই করতে চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের তিনটি করে শব্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে সহজ তিনটি শব্দের একটিও পড়তে পারেনি ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী। তিনটির মধ্যে একটি শব্দ পড়তে পেরেছে ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী। দুটি শব্দ পড়তে পেরেছে ২২ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। ৬০ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী তিনটি সহজ শব্দ পড়তে পেরেছে।

একইভাবে, কঠিন বানানের তিনটি শব্দের মধ্যে একটিও পড়তে পারেনি ১৯ দশমিক ৪ শতাংশ শিক্ষার্থী। একটি কঠিন শব্দ পড়তে পেরেছে ১৭ শতাংশ শিক্ষার্থী। দুটি শব্দ পড়তে পেরেছে ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী। সবকটি শব্দ পড়তে পেরেছে ৩৭ দশমিক ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী।

তৃতীয় শ্রেণির ৩১ হাজার ৫৮ জন শিক্ষার্থীকে পুরো একটি লেখা পড়তে গিয়ে দেখা গেছে, ৩৬ দশমিক ৭ শতাংশ বা ১১ হাজার ৩৯৭ জন লেখাটা একেবারেই পড়তে পারেনি। পড়তে পারলেও জড়তা ছিল এবং বিরাম চিহ্নের সঠিক ব্যবহার জানে না ৩৯ দশমিক ৪ শতাংশ শিক্ষার্থী।

একই পরীক্ষায় দেখা গেছে, চতুর্থ শ্রেণির ৩১ হাজার ৬৪৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩০ দশমিক ২ শতাংশ বা ৯ হাজার ৫৬০ জন পুরো লেখাটা একেবারেই পড়তে পারেনি।

গণিতের এক মূল্যায়নে দেখা যায়, তৃতীয় শ্রেণির ১৩ দশমিক ২ শতাংশ শিক্ষার্থী কোনো সংখ্যাই চেনে না। তিনটি পৃথক সংখ্যা দিয়ে কোনটি কি প্রশ্ন করলে দেখা গেছে, ১১ দশমিক ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী তিনটির একটিও চিনতে পারছে না। তিনটির মধ্যে দুটি সংখ্যা চিনতে পেরেছে ১৯ দশমিক ২ শতাংশ শিক্ষার্থী। তিনটি সংখ্যাই চিনেছে ৫৬ শতাংশ শিক্ষার্থী।

দুই ধরনের যোগ করতে দিয়ে দেখা গেছে, এক ধরনের যোগে ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী কোনো উত্তর দেয়নি আর ৯ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ভুল করেছে। আরেক ধরনের যোগে ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী কানো উত্তর দেয়নি এবং ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ভুল করেছে। ভাগ করতে দিয়ে দেখা গেছে, ৫৯ দশমিক ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী কোনো উত্তর দেয়নি এবং ১৮ দশমিক ২ শতাংশ ভুল উত্তর দিয়েছে।