ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের সমন্বয়-সহযোগিতা স্থগিত করল ফিলিস্তিন

অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিনে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নজিরবিহীন অভিযানের পর ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ ও নিরাপত্তা সমন্বয়-সহযোগিতা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। খবর রয়টার্স।

জেনিনে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান

সোমবার (৩ জুলাই) রামাল্লায় ফিলিস্তিনি নেতৃত্বের বৈঠকের পর ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্সির মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেনেহ জানান, জেনিনের ওপর ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়া হিসাবে ইসরায়েলি পক্ষের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ, বৈঠক বন্ধ এবং নিরাপত্তা সমন্বয় বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব।

রুদেনেহ আরও জানান, আকাবা ও শারম এল শেখ বৈঠকে ইসরায়েলের সঙ্গে সাম্প্রতিক সব বোঝাপড়া ও প্রতিশ্রুতি এখন আর বিদ্যমান নেই। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে শান্তি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ও ১৯ মার্চ বৈঠক দুটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলা

এর আগে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নতুন এই হামলাকে ‘নতুন যুদ্ধাপরাধ’ হিসেবে উল্লেক করে এর নিন্দা জানিয়েছে ফিলিস্তিন। আবু রুদেনেহ এক বিবৃতিতে বলেন, ইসরায়েলি দখলদার সরকার জেনিন শহর ও এর শিবিরে যা করছে তা আমাদের প্রতিরক্ষাহীন জনগণের বিরুদ্ধে একটি নতুন যুদ্ধাপরাধ।

তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলিদের নৃশংস এই আগ্রাসনের মুখেও ফিলিস্তিনি জনগণ আত্মসমর্পণ করবে না। বরং তারা দখলদারদের পরাজয় ও নিজেদের স্বাধীনতা অর্জন পর্যন্ত এ লড়াইয়ে অটল থাকবে।

আবু রুদেনেহ বলেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও বসতি স্থাপনকারীদের দ্বারা সংঘটিত এ অপরাধ তাদের জন্য কোনো নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার নিশ্চয়তা দিতে পারবে না, যদি ফিলিস্তিনিরাও অনুরূপ নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা অনুভব না করে। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তাদের ‘লজ্জাজনক নীরবতা’ ভাঙার পাশাপাশি ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে তার আগ্রাসন বন্ধ এবং এই অপরাধের জন্য তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছেন।

ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জেনিন অভিযানকে ‘বর্বর আগ্রাসন’ বলে অভিহিত করে দাবি করেছে, এটি ইসরায়েলের সরকারি নীতিরই একটি অংশ, যাতে বলা হয়েছে, সংঘাতের রাজনৈতিক সমাধানের বিকল্প হিসাবে অরক্ষিত ফিলিস্তিনি জনগণের মোকাবেলায় সামরিক শক্তি ব্যবহার করা।

মন্ত্রণালয় অবিলম্বে আগ্রাসন বন্ধ করার জন্য জরুরি আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে নীরবতা ভঙ্গ করে ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধীদের জবাবদিহিতা শুরু করতে আহ্বান জানিয়েছে।

এদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, জেনিন শরণার্থী শিবিরে ‘সামরিক অভিযান’ আমাদের ধারাবাহিক পদক্ষেপের একটি অংশ এবং আমরা তা চালিয়ে যাব। তিনি এই অভিযানকে পশ্চিম তীরের ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ উদ্যোগের অংশ হিসেবে বর্ণনা করে দাবি করেন, তারা একটি ভবনে হামলা চালিয়েছে, যেটি জেনিন ব্রিগেডের সদস্যদের সামরিক সদর দপ্তর হিসেবে ব্যবহার হচ্ছিল।

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সোমবার ভোরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গুলিতে অন্তত নয়জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এরমধ্যে জেনিনেই আটজন নিহত হয়েছে। এ সময়ে আহত হয়েছে অন্তত ৫০ ফিলিস্তিনি। মন্ত্রণালয়ের মতে, চলতি বছরের শুরু থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে প্রায় ১৯০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) সোমবার অধিকৃত পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি শহর জেনিনে ইসরায়েলি অভিযানের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, ইসরায়েলি দখলদারিত্ব ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে জঘন্য এই অপরাধটি চালিয়ে যাচ্ছে। এটি একটি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ। এর অবসান ঘটাতে এবং ফিলিস্তিনি জনগণকে সুরক্ষা দিতে ওআইসি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।