ইউক্রেনকে আর অস্ত্র দেবে না মিত্র পোল্যান্ড

শস্য নিয়ে সৃষ্ট কূটনৈতিক বিরোধের জেরে ইউক্রেনকে আর অস্ত্র সরবরাহ করবে না বলে জানিয়েছে দেশটির অন্যতম প্রধান মিত্র পোল্যান্ড। গতকাল বুধবার টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাতেউস মোরাউইকি এ ঘোষণা দেন। খবর বিবিসি।

পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাতেউস মোরাউইকি

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর প্রথম পর্যায় থেকেই কিয়েভকে সর্বোতভাবে সমর্থন দিয়ে আসছিল পোল্যান্ড। এমন তারা হয়ে উঠে ইউক্রেনের অন্যতম প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ। সবমিলিয়ে কিয়েভের বিশ্বস্ত মিত্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করে পোল্যান্ড।

তবে ইউক্রেন থেকে শস্য আমদানি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে স্বার্থের দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। নিজ দেশের কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় পোল্যান্ড ইউক্রেন থেকে শস্য আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। বিষয়টি নিয়ে ওয়ারশ ও কিয়েভের মধ্যে উত্তেজনার সূত্রপাত হয়।

যুদ্ধের শুরু থেকে প্রচুর অস্ত্র দিয়েছে পোল্যান্ড

গত মঙ্গলবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে এ ইস্যুতেও কথা বলেন ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি বলেন, ইউরোপের কিছু দেশ শস্য রপ্তানি ইস্যুতে এমন অবস্থান নিয়েছে, যা এক হিসেবে রাশিয়াকেই সহায়তা করছে।

তার এ ধরনের মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয় পোল্যান্ড। জেলেনস্কির এ অভিযোগকে অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে এর নিন্দা জানায় ওয়ারশ। সেই সঙ্গে পোল্যান্ডে নিযুক্ত ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এর প্রতিবাদ করে।

গতকাল একটি টিভি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট মাতেউস মোরাউইকি এ ইস্যুতে কথা বলেন। তিনি বলেন, ইউক্রেনের শস্য আমদানি করা হলে পোলান্ডের কৃষিশিল্প অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। আমরা আমাদের কৃষকদের রক্ষা করতে চাই। ইউক্রেন যে আচরণ করছে, সে ব্যাপারে আমরা তাদের সতর্ক করছি। তারা যদি আমাদের সঙ্গে বিরোধ বাড়াতে চায়, তাহলে ইউক্রেন থেকে আমদানি নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আরও পণ্য যুক্ত করব।

এ সময় তিনি বলেন, আমরা এই মুহূর্তে আর ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ করছি না। বরং আমরা এখন পোল্যান্ডকে আরও আধুনিক অস্ত্র দিয়ে সজ্জিত করার দিকে মনোযোগ দিচ্ছি।

গত মে মাসে পোল্যান্ড, বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি, রোমানিয়া ও স্লোভাকিয়ায় ইউক্রেনের শস্য আমদানি সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করেছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন। স্থানীয় কৃষকদের রক্ষায় এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। ওই নিষেধাজ্ঞা গত ১৫ সেপ্টেম্বর শেষ হলেও পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়ায় তা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। যুক্তি হিসেবে তারা জানায়, সস্তায় শস্য আমদানির প্রভাব থেকে নিজ দেশের কৃষকদের রক্ষা করতে এই নিষেধাজ্ঞার দরকার আছে। এ নিয়ে দেশ তিনটির সঙ্গে ইউক্রেনের বিরোধ সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নিয়ে এই তিন দেশের বিরুদ্ধে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) কাছে মামলা দায়ের করে ইউক্রেন।

প্রসঙ্গত, রাশিয়ার আগ্রাসন মোকাবেলায় ইউক্রেনকে শুরু থেকে অনেক সহায়তা দিয়েছে পোল্যান্ড। জার্মানির তৈরি লেপার্ড-২ যুদ্ধ ট্যাংক কিয়েভকে সরবরাহে জোর প্রচেষ্টার পাশাপাশি দেশটিকে যুদ্ধবিমান দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল তারা। এছাড়া যুদ্ধের কারণে পালিয়ে আসা ১৫ লাখের বেশি ইউক্রেনীয় শরণার্থীকেও আশ্রয় দিয়েছে পোল্যান্ড।