গাজার হাসপাতালে বোমা হামলায় নিহত ৫০০, বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড়

অবরুদ্ধ গাজার একটি হাসপাতালে ব্যাপক বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এ হামলায় এ পর্যন্ত ৫০০ ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আরও কয়েকশত মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছে বলে জানা গেছে। হাসপাতালো চালানো বর্বরোচিত এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে কাতার, তুরস্ক, মিশরসহ পুরো বিশ্ব। খবর বিবিসি, আল জাজিরা।

হাসপাতালে হামলার পর আতঙ্কিত লোকজন

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হাজারো মানুষ চিকিৎসা ও নিরাপত্তার জন্য আশ্রয় নিয়েছিল মধ্য গাজার আল-আহলি নামের ওই হাসপাতালে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটার দিকে সেখানে ইসরায়েল বাহিনী হামলা চালালে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয় হাসপাতালটি।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায়, হাসপাতালটিতে একাধিক বিস্ফোরণ ঘটছে। এর পরপর হাসপাতালের বহুতল ভবনটিতে আগুন ধরে যায়। বিভিন্ন ছবিতে দেখা গেছে, হাসপাতালের চারপাশে এদিক-সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে মরদেহ। ধ্বংসস্তূপ থেকেও ভেসে আসছে আটকে পড়া ব্যক্তিদের আর্তচিৎকার।

আল আহলি হাসপাতাল

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরায়েলি হামলায় সেখানে আশ্রয় নেওয়া অন্তত ৫০০ মানুষ নিহত হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে চাপা পড়ে আছেন আরও অনেকে। ফলে নিহতের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এছাড়া উদ্বাস্তুদের জন্য আবাসন হিসেবে ব্যবহৃত জাতিসংঘ পরিচালিত একটি স্কুলেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের বর্বরোচিত এ হামলায় নিহতদের স্মরণে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন ফিলিস্তিন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।

এদিকে হাসপাতালে হামলা চালানোর অভিযোগে ইসরায়েলের নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। এমনকি ইসরায়েলের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেছে মিত্র বলে পরিচিত কানাডা, ফ্রান্সও।

গাজায় হাসপাতালে এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ বলেছেন, এটি পরিষ্কার ‘গণহত্যা’। এভাবে সাধারণ মানুষকে হত্যা ‘মানবতার জন্য লজ্জাজনক’। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে ইসরায়েল যে ন্যূনতম মানবিক মূল্যবোধও বজায় রাখছে না, গাজার হাসপাতালে হামলা তার সর্বশেষ উদাহরণ। তিনি এ ধরনের নজিরবিহীন নৃশংসতা বন্ধে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হাসপাতালে ইসরায়েলি বাহিনীর এ বোমা হামলাকে ‘জঘন্য অপরাধ’ অভিহিত করে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসরায়েলের তীব্র সমালোচনা করে বলেছে, দেশটি যেভাবে গাজার হাসপাতাল, স্কুল ও জনবহুল এলাকায় হামলা করছে, তাতে সংঘাত ভয়ংকরভাবে বিস্তৃত হচ্ছে।

মিশর এ হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, বেসামরিক নাগরিকদের ওপর এ ধরনের নির্বিচার হামলা ‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের চরম লঙ্ঘন’। হাসপাতালে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ইরানও। এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, জঘন্য এই অপরাধের মাধ্যমে ইসরায়েল আরও একবার বিশ্বের সামনে তাদের অমানবিক ও পাশবিকতাকেই তুলে ধরেছে। সিরিয়া এই হামলাকে মানবতার বিরুদ্ধে সবচেয়ে নৃশংস ও রক্তক্ষয়ী গণহত্যাগুলোর অন্যতম অভিহিত করে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।

গাজায় এ হামলার নিন্দায় মুখর হয়েছে পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোও। হাসপাতালে এ ধরনের হামলাকে অগ্রহণযোগ্য আখ্যা দিয়ে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, যুদ্ধের নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে হাসপাতালে এভাবে হামলা করার ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এ হামলার নিন্দা জানিয়ে ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, মানবাধিকবিষয়ক আন্তর্জাতিক আইন সবাইকেই মেনে চলতে হবে। বেসামরিক লোকজনের নিরাপত্তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।

গাজার হাসপাতালের হামলার নিন্দা জানিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংস্থা আরব লীগও। সংস্থাটির প্রধান আহমেদ ঘেইত বলেছেন, অবিলম্বে এই ধরনের ‘ট্রাজেডি’ বন্ধ করতে হবে। গাজার হাসপাতালে হামলার নিন্দা জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিওএইচও) । সংস্থাটির মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়াসুস অবিলম্বে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।