নানা অজুহাতে ফের চড়েছে তরমুজের দাম, কেজি ৬০ থেকে ১২০ টাকা!

গরমে ঠান্ডা হওয়ার জন্য তরমুজ পছন্দ করে থাকেন অনেকেই। কিন্তু তরমুজের দাম পরিস্থিতি এতটাই খারাপ করে তুলেছিল যে, ক্রেতারা বয়কট করতে শুরু করেন। একপর্যায়ে দাম মোটামুটি হাতের নাগালেই চলে এসেছিল। কিন্তু মৌসুমের শেষ দিকে আবারও আকাশচুম্বী তরমুজের দাম। কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত। এর পেছনে তাদের অজুহাত কিংবা যুক্তির কমতি নেই।

তরমুজের দাম আবারও চড়েছে

এবার তরমুজের মৌসুম শুরু হয়েছিল রমজানের আগেই। রমজানের পাশাপাশি তীব্র গরমকে কেন্দ্র করে ক্রেতাদের পকেট কাটতে প্রস্তুত মধ্যস্বত্বভোগীরা গড়ে তোলেন সিন্ডিকেট। ফলে ৭০-৮০ টাকা কেজির নিচে কোনোভাবেই তরমুজ কেনা সম্ভব হচ্ছিল না।

এমন অবস্থায় বিভিন্ন যোগাযোগমাধ্যমে তরমুজ বয়কটের আহ্বান জানানো হয়। তাতে সাড়া দিয়ে অনেকেই তরমুজ কেনা থেকে বিরত থাকেন। বাংলাদেশ অ্যাগ্রি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) উদ্যোগে রাজধানীর পাঁচটি স্থানে ন্যায্য মূল্যে তরমুজ বিক্রি শুরু হয়। সব মিলিয়ে তরমুজ মোটামুটি ক্রেতাদের হাতের নাগালে চলে আসে। ৩০-৪০ টাকা কেজিতে পাওয়া যায় তরমুজ।

তবে ঈদের পর যেন সেই ‘ক্ষতি’ পুষিয়ে নিতে নামে পুরোনো সিন্ডিকেট। তীব্র দাবদাহে তরমুজের চাহিদা বেড়েছে বহুগুণ। এতে যেন সিন্ডিকেট ক্রেতাদের শায়েস্তা করার পথ খুঁজে পায়! পিস কিংবা কেজি যেভাবেই কিনুন না কেন, তরমুজের কেজি পড়ে যাচ্ছে ৬০ টাকার উপরে। স্থানবিশেষে ১২০ টাকাতেও বিক্রি করা হচ্ছে রসালো এই ফল। বিক্রেতারা এর জন্য অবশ্য নানা অজুহাত ও যুক্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার বিশ্লেষণে এই চিত্র দেখা গেছে।

বিভিন্ন এলাকাতে চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে তরমুজ

পুরানা পল্টন মোড়ের দোকানগুলোতে বিদেশি ফলের ভিড়ে তরমুজেরও দেখা পাওয়া যায়। পিস হিসেবে বিক্রি করলেও যাচাই বাছাই করে দেখা যায়, এর প্রতি কেজির দাম পড়ছে ৮০ টাকার উপরে। দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে তারা জবাব দেন, তরমুজের মৌসুম এখন শেষের দিকে। তাই দাম বেশি। তবে এখনকার তরমুজ ‘লাল-মিষ্টি’ হবে গ্যারান্টি। খুলনার তরমুজ দাবি করেও আরেক বিক্রেতা দাম বেশির যৌক্তিকতা তুলে ধরেন।

তবে পল্টনেরই এক দোকানে দেখা মেলে ১২০ টাকা কেজির তরমুজের। তারা দাবি করেন, তাদের সব ফলই ফ্রেশ। তাই একটু দাম বেশি। যুক্তি হিসেবে বলেন, ভালো জিনিস খেতে চাইলে দাম একটু বেশিই দিতে হবে।

ফার্মগেট এলাকায় তরমুজের দামটা পল্টনের চেয়ে সামান্য কম। সেখানে ৬০ টাকা কেজিতে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। দাম বেশি কেন জিজ্ঞাসা করা হলেও এক বিক্রেতা জানান, একে তো সিজন শেষ তাই দাম বেশি। আর শুরুর দিকে বয়কটের মুখে পড়ে যে ক্ষতি হয়েছিল, সেটাও পুষিয়ে নেওয়ার একটা ব্যাপার আছে। তাই তরমুজের দাম এখন এ রকমই থাকবে। আরেক বিক্রেতা অবশ্য সহজ ভাষায় জবাব দিলেন, আমাদের বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে, তাই বেশি দামেই বিক্রি করছি।

ফার্মগেট এলাকারই আরেক বিক্রেতার কাছে দাম বেশির অভিযোগ করা হলে তিনি বলেন, আগের তরমুজগুলো ছিল ছোট, অপরিপক্ক। মৌসুমের শেষ দিকে এখন সব তরমুজই পরিপক্ক ও বড়। ফলে লাল ও মিষ্টির গ্যারান্টি থাকছে। ফলে দাম একটু বেশিই দিতে হচ্ছে।

মিরপুর এলাকাতে গিয়ে দেখা যায়, বিক্রেতারা বিশাল বিশাল সাইজের তরমুজ নিয়ে বসে আছেন। ৬-১৪ কেজি ওজনের তরমুজগুলো বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা কেজি দরে। মিরপুর এলাকায় বরিশালের তরমুজ বেশি বিক্রি হয় জানিয়ে এক বিক্রেতা বলেন, এখনকার তরমুজগুলো একদম তাজা। এগুলো রঙ যেমন টকটকে লাল, আরও মিষ্টিও কড়া। গ্যারান্টি দিয়ে বিক্রি করছি, দাম তো কিছুটা বেশি হবেই।

বিক্রেতারা নানা অজুহাত ও যুক্তি দেখালেও ক্রেতারা দাবি করছেন, দাম কমায় মানুষ বয়কট থেকে সরে এসেছে। আবার গরমও পড়েছে। সুযোগ বুঝে বিক্রেতারা তরমুজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। একে তো দাম বেশি, তার ওপর এখনকার তরমুজগুলো সাইজেও একটু বড়। ফলে মোটামুটি আকারের একটি তরমুজ কিনতে গেলেও ৫০০-৬০০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে।

ক্রেতারা আরও বলছেন, আর তারা যে সিন্ডিকেট করেছে, তা তো বোঝাই যায়। কারণ ফুটপাতে বসে বিক্রি করলেও কেউ সামান্যতম দামও কমাচ্ছেন না। একেবারে ফিক্সড প্রাইজে বিক্রি করছেন। ফলে বয়কট করুন আর না করুন, অনেকের পক্ষেই আর তরমুজের দোকানের পাশে যাওয়া আর সম্ভব হয়ে উঠছে না।