দেশজুড়ে সংঘর্ষে নিহত ১০

আজ রোববার সিরাজগঞ্জ, পাবনা, মুন্সীগঞ্জ ও মাগুরায় বিক্ষোভকারী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

ফাইল ছবি

ইউনাইটেড নিউজ অফ বাংলাদেশের (ইউএনবি) এক প্রতিবেদন অনুসারে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে চলমান 'সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন'-এর মধ্যে সিরাজগঞ্জে বিক্ষোভকারী, আওয়ামী লীগ কর্মী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত চারজন নিহত ও বহু লোক আহত হন।

এছাড়াও, জেলায় ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে থানা এবং দুই সংসদ সদস্যের বাড়িও রয়েছে।

ইউএনবি'র স্থানীয় সংবাদদাতা জানান, নিহতদের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। তবে তাদের মরদেহ উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।

স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিক্ষোভকারীরা প্রথমে সকাল ১১টার দিকে সদর উপজেলার এস এস রোডে জড়ো হয়ে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা চালায়।

আওয়ামী লীগ কর্মীরা বাধা দিতে এলে তাদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়, এতে ঘটনাস্থলেই একজন নিহত হন।

এর পরপরই সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে, এতে আরও তিনজন নিহত ও অসংখ্য আহত হন।

বিক্ষোভকারীরা সিরাজগঞ্জ-২ ও ৬ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য যথাক্রমে মো. হাবিবে মিল্লাত ও মেরিনা জাহানের বাসভবন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।

এছাড়াও জেলা প্রশাসক ও সদর উপজেলার সহকারী কমিশনারের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়।

এছাড়াও কয়েকটি পুলিশ ফাঁড়ি এবং হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানায় হামলা চালানো হয়। এছাড়াও, বিক্ষোভকারীরা বেলকুচি থানা ঘেরাও করে।

পাবনা শহরে রোববার বিকেলে বিক্ষোভকারী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে এক ছাত্রসহ তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত ও ১৬ জন আহত হন।

নিহতদের মধ্যে দুইজন হলেন – পাবনার সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের ছাত্র জাহিদুল ইসলাম (১৯) ও মাহফুজুল আলম (১৬)।

পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম দুই যুবকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক রফিকুল ইসলাম জানান, আরেকজন ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে, যার পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর ১২টার দিকে সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা কলেজ থেকে একটি মিছিল বের করে পাবনা শহরের ট্রাফিক মোড় এলাকায় যায়।

অভিযোগ রয়েছে, ট্রাফিক মোড় এলাকায় আওয়ামী লীগ কর্মীরা তাদের ওপর গুলি চালায়।

পরে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

আহতদের পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে জাহিদুল ও মাহফুজুলকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

হাসপাতালের সহকারী পরিচালক রফিকুল ইসলাম জানান, গুলিবিদ্ধ আহত অবস্থায় ৮ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, যাদের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক অজ্ঞাত ব্যক্তির মৃত্যু হয়।

রোববার সকালে মুন্সীগঞ্জ শহরের সুপারমার্কেট এলাকায় বিক্ষোভকারী, পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ সমর্থিত যুব সংগঠন যুবলীগের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত দুইজন নিহত এবং সাতজন গুলিবিদ্ধ হন। নিহতদের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।

এ ঘটনার সংবাদ সংগ্রহকালে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা নিউ এইজের মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি মো. মঈনুদ্দিন আহমেদ শুভনকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে। শহরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

রোববার মাগুরায় বিক্ষোভকারী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি নিহত হন।

মাগুরা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মোহসীনুদ্দীন ফকির এ খবর নিশ্চিত করেছেন।

শনিবার ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে এক সমাবেশে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করার পর রোববার সারাদেশে এই সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে তারা জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত ২০০ জনেরও বেশি মানুষের বিচারের দাবিতে নয় দফা দাবি আদায়ের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল।

শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে আলোচনার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের একজন নাহিদ ইসলাম সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করেন।

নিউএজ অবলম্বনে