ছয় গুলিতেও বেঁচে আছেন আমির, জানালেন সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা

গত ২৩ জুলাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও সকলকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। রামপুরার একটি নির্মাণাধীন ভবনের কার্নিশে ঝুলে থাকা এক যুবকের দিকে  পুলিশের গুল করার দৃশ্য দেখে অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, ওই যুবক ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন।

আমির

ভিডিওটিতে গুলির শব্দ পাওয়া গেছে এবং পুলিশের আচরণ দেখে মনে হয়েছিল পরিস্থিতি ভয়াবহ। কিন্তু সেই ভয়ঙ্কর ঘটনার ভুক্তভোগী আমির আজ জীবিত।

ডেইলি স্টারের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ওই ঘটনার দিন আমির যখন জুমার নামাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন, তখন বিজিবি এবং পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। ভয়ে তিনি দৌড়ে পালিয়ে যান এবং ওই নির্মাণাধীন ভবনের চতুর্থ তলায় আশ্রয় নেন।

আমির ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সংঘর্ষের এক পর্যায়ে বেশ কয়েকজন পুলিশ ভবনের ভেতরে ঢুকে পড়ে। ভয়ে আমি চতুর্থ তলার একটি কার্নিশে ঝুলে নিজেকে লুকানোর চেষ্টা করি।’

কিন্তু পুলিশ তাকে সেখানেও খুঁজে পায়।

‘তারা (পুলিশ) আমাকে ভয় দেখিয়ে বলে, ভবন থেকে লাফ দাও, নাহলে গুলি করব,’ ভয়ে কাঁপা কণ্ঠে বলেন আমির।

আর তারপরই তৃতীয় তলা থেকে একাধিখ পুলিশ সদস্য আমিরের ওপর ছয় রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে। ছয়টি গুলিই আমিরের দেহে লাগে। উভয় পায়ে তিনটি করে।

গুরুতর আহত অবস্থায়ও পুলিশ চলে না যাওয়া পর্যন্ত আমির লোহার রডটি ধরে রাখেন।

‘আমি চিৎকার করেছিলাম, কিন্তু কাছের সংঘর্ষের তীব্র শব্দে আমার আর্তনাদ শোনা যাচ্ছিল না,’ বলেন আমির।

‘আমি প্রায় আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম আমি মারা যাব। আমার দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছিল, কিন্তু আমার মনের একটা অংশ হার মানতে চাইছিল না। আমি ভাবছিলাম, আমি এভাবে মরতে পারি না। আমার বৃদ্ধ বাবার কথা, আমার বোনের কথা, যার বিয়ে দেওয়ার জন্য আমি টাকা জমাই, সেসব চিন্তা আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছিল। এভাবে আমি মরতে চাইনি,’ বলেন আমির।

প্রায় তিন ঘন্টা পর সংঘর্ষ থামলে একজন ছাত্র ভবনের ভেতরে ছুটে আসেন এবং রক্তক্ত পড়ে থাকা আমিরকে খুঁজে পান।

কাছের একটি হাসপাতালের দুইজন ডাক্তার, যারা ওই এলাকায় ছিলেন, তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধারকাজে যোগ দেন। তারা রক্তপাত বন্ধ করার জন্য মরিয়া চেষ্টা করেন।

আমির বলেন, ‘তারা আমাকে বারবার বলছিলেন, তোমার চোখ বন্ধ করো না। আমরা তোমাকে মরতে দেবো না। অনুগ্রহ করে চোখ বন্ধ করো না।’

তারা তাকে ফ্যামাস হাসপাতালে নিয়ে যান, যেখানে তাকে রাতেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) স্থানান্তর করা হয়।

আমির এত রক্তক্ষয় হয়েছিল যে হাসপাতালে তাকে তিন ব্যাগ রক্ত ​​দিতে হয়। তিন দিন পর, তাকে ঢামেক থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

আমিরের চিকিৎসার বিষয়টি গোপন রাখা হয়। ‘ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর, আমরা শুনতে পাই পুলিশ আমাদের খুঁজছে,’ বলেন আমিরের খালা নাসিমা বেগম।

‘ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর, আমরা শুনতে পাই পুলিশ আমাদের খুঁজছে। এমন গল্পও শুনেছি যে, পুলিশ গুলিবিদ্ধ লোকজনকে তুলে নিচ্ছে। তাই আমরা চুপচাপ ছিলাম। সাংবাদিকরাও তাকে খুঁজছিলেন, কিন্তু ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের খবর শুনে আমরা কথা বলার সাহস পাই,’ আরও বলেন নাসিমা বেগম।

ঢামেক থেকে ছাড়া পাওয়ার পর আমির এখন মেরাদিয়ার নোয়াপাড়ার বস্তিতে তার ঢাকার বাসায় চিকিৎসাধীন।

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন যে, আমিরের দ্রুত আরোগ্য হওয়ার কারণ হলো ছয়টি গুলির কোনটিই তার হাড়ে আঘাত করেনি। তবে, আমির এখনও নিজে দাঁড়াতে পারেন না। সম্পূর্ণরূপে সুস্থ হতে সময় লাগবে।

এই ঘটনায় আমিরের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও কোন অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।