৫৫ কোটি ডলার: ইসলামী ব্যাংককে কেন্দ্র করে নতুন বিতর্ক

রিজার্ভ থেকে ইসলামী ব্যাংককে ‘বিশেষ সুবিধা’ দেওয়ার অভিযোগে তোলপাড় বাংলাদেশ ব্যাংক। গত জুলাই মাসে ৫৫ কোটি ডলারের বিনিময়ে ইসলামী ব্যাংককে ৬,৪৯০ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ঘটনায় নতুন করে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাংশ কর্মকর্তার অভিযোগ, সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এবং রিজার্ভ ও ট্রেজারি বিভাগের আরও কিছু কর্মকর্তা এই ‘আপত্তিকর লেনদেনে’ জড়িত ছিলেন।

ইসলামী ব্যাংকের লোগো

ঘটনার শুরু জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ইসলামী ব্যাংকের মধ্যে একটি ডলার-টাকা লেনদেন সম্পন্ন হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ৩ জুলাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৫৫ কোটি ডলারের বিনিময়ে ইসলামী ব্যাংককে ৬,৪৯০ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা দেয়। কাগজে-কলমে, প্রতি ডলারের বিনিময়ে ১১৮ টাকা হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভে ৫৫ কোটি ডলার যোগ হওয়ার কথা থাকলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছিল মাত্র ১০ কোটি ডলার। বাকি ৪৫ কোটি ডলার জমা পড়ে ১১ আগস্টের পর, অর্থাৎ দেশে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং ইসলামী ব্যাংকের উচ্চপদে ব্যাপক রদবদলের পর।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এবং রিজার্ভ ও ট্রেজারি বিভাগের আরও কিছু কর্মকর্তা ইসলামী ব্যাংককে ‘আপত্তিকর বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের’ সুবিধা দিতে জড়িত ছিলেন।”

তিনি আরও বলেন, “এই সিদ্ধান্তের ফলে তৎকালীন সময়ে ইসলামী ব্যাংকের সর্বাধিক শেয়ারহোল্ডার এবং নিয়ন্ত্রক বিবাদমান এস আলম গ্রুপ লাভবান হয়েছে।”

রিজার্ভ ও ট্রেজারি ব্যবস্থাপনা বিভাগের নির্বাহী পরিচালক মো. কবির আহমেদ বলেন, “সাবেক গভর্নরের নির্দেশনার আলোকে এই বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে। বকেয়া অর্থ পরিশোধ না করায় ইসলামী ব্যাংককে ৩০ লক্ষ ডলার জরিমানা করা হয়েছে।”

এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য সাবেক গভর্নর তালুকদারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি যোগাযোগের আওতায় ছিলেন না।

যদিও নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এ ঘটনাকে ‘অপ্রত্যাশিত’ বলে মন্তব্য করেছেন এবং জানিয়েছেন যে বকেয়া অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে।

তবে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তাফা কামাল মুজেরী মনে করেন, দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা উচিত।

তিনি বলেন, “আমরা অতীতে এই ধরনের অনেক অনিয়ম দেখেছি যা এখন বহির্গত হচ্ছে। কিছু ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ রক্ষার জন্য এই ধরনের অনৈতিক সুবিধা দেওয়া হয়েছে, যার উপযুক্ত তদন্ত হওয়া উচিত। যারা এই অনিয়মের সাথে জড়িত ছিল তাদের বিলম্ব না করে শাস্তির আওতায় আনা উচিত।”