শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন নিয়ে টাইম ম্যাগাজিনের প্রতিবেদন

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত মার্কিন টাইম ম্যাগাজিনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা শেখ হাসিনার নির্বাচনে অংশগ্রহণের সম্ভাবনা ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে তুলবে। দেশি-বিদেশি রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এই মতামত ব্যক্ত করেছেন।

শেখ হাসিনা

টাইমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘হাসিনার প্রত্যাবর্তন বেশ বিশ্বাসযোগ্য,’ উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন।

‘আপনি যদি দক্ষিণ এশিয়ার রাজবংশীয় রাজনীতির ইতিহাস পর্যালোচনা করেন, তাহলে দেখতে পাবেন যে রাজবংশীয় দলগুলো যখন দুর্বল অবস্থানে থাকে তখনও তাদের সম্পূর্ণরূপে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’

ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণ-অভ্যুত্থানের মধ্যে গত ৫ জুলাই শেখ হাসিনার ১৫ বছরের প্রধানমন্ত্রীত্বের পর্দা নামে। তিনি পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান। এই অভ্যুত্থানে শত শত মানুষ হতাহত হয়।

ঢাকাভিত্তিক সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক এবং টকশো উপস্থাপক জিল্লুর রহমান টাইমকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার যদি চরমভাবে ব্যর্থ না হয় তবে আগামী এক দশকে শেখ হাসিনা এবং তার দল বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোনো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারবে না।

গত ৮ জুলাই নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তবে, বর্তমানে সরকার নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।

টাইম উল্লেখ করেছে যে, ১৫ বছরের ধারাবাহিক শাসনামলে হাসিনার আওয়ামী লীগ প্রায় প্রতিটি সরকারি প্রতিষ্ঠানকেই রাজনীতিকরণ করেছে, যা সেনাবাহিনী, আদালত, প্রশাসন এবং বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি গভীর অবিশ্বাসের জন্ম দিয়েছে।

গত ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচনী ব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, প্রশাসন, সংবিধান এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল, রাষ্ট্রদূত এবং প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা শহীদুল হক টাইমকে বলেন, রাজনীতিকরণ করা আমলাতন্ত্র সংস্কারকে বানচাল করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘তারা এই সরকারকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। আর যদি দৃশ্যমান কোনো উন্নতি না হয় তাহলে জনগণ ধৈর্য হারাবে।’

শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় এই বিষয়টির ওপর ভরসা করছেন।

তিনি টাইমকে বলেন, ‘যদি তারা এক বছর বা ১৮ মাসের জন্য দেশ চালাতে চায়, তাহলে আমার মনে হয় এটা উত্তম। গণ-অরাজকতা’ এবং প্রতিবাদকারীরা মূলত অশান্তি সৃষ্টি করছে।’

তবে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক উপ-পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি মনে করেন, আইনশৃঙ্খলার সম্পূর্ণ পতন ঘটেনি। তিনি টাইমকে বলেন, ‘কোনও গণহত্যা হয়নি, এবং সাম্প্রতিক সময়ে বড় ধরনের কোনো হামলার ঘটনাও আমরা দেখিনি।’

অন্যান্য পর্যবেক্ষকরা হাসিনার নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে তেমন আশাবাদী নন। কারণ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে শেখ মুজিবের মূর্তি ভেঙে ফেলা হয়েছে, হাসিনার পোস্টারে বিকৃত লেখা লেখা হয়েছে এবং তাকে স্বৈরাচারী বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।

নরওয়ের অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি গবেষক মুবাশ্বের হাসান টাইমকে বলেন, ‘এভাবেই তরুণ প্রজন্মের কাছে শেখ হাসিনার উত্তরাধিকার কল্পনা করা হচ্ছে।’

সজীব ওয়াজেদ জয় দাবি করেন যে, তার কোনো রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ নেই এবং শেখ হাসিনা নির্বাচনে ফিরে আসবেন কিনা সে বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

জয় বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে কে জানে ভবিষ্যতে কী হবে? আমি এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি।’

পর্যবেক্ষকরা আরও মনে করছেন যে, সজীব ওয়াজেদ জয়ের বাংলাদেশে রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। কারণ তিনি জননেতা হিসেবে নিজের ভাবমূর্তি তৈরি করতে পারেননি এবং আওয়ামী লীগও শেখ হাসিনার বিকল্প ভাবতে পারছে না।

জিল্লুর রহমান টাইমকে বলেন, "আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো শেখ হাসিনাকে কেন্দ্র করে তাদের ব্যক্তিত্বের এক ধরনের পূজা।"

তিনি আরও বলেন, ‘তারা শেখ মুজিবের মেয়ের বিকল্প কল্পনাও করতে পারে না।’

জিল্লুর রহমানের মতে, যদি সজীব ওয়াজেদ জয় নিজেকে জননেতা হিসেবে গড়ে তুলতে না পারেন তাহলে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

অসলোর ওই গবেষক মুবাশ্বের হাসানও একই কথা বলেন। টাইম ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘তার (জয়ের) জন্য তরুণদের মনে কোনো শ্রদ্ধা বা আবেগ নেই। অথচ জনসংখ্যার বিষয়টি রাজনীতিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’