আনন্দবাজার: ড. ইউনূসের সফল কূটনীতিতে দুশ্চিন্তায় নয়াদিল্লি!

দুই মাস আগে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশের ক্ষমতার শীর্ষবিন্দু থেকে সরে যেতে বাধ্য হয় আওয়ামী লীগ। দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে আশ্রয় নেন ভারতে। বিষয়টি ভারতের জন্য বেশ বিব্রতকর একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ সম্মেলনেও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মুখোমুখি হওয়া এড়িয়ে গেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু তারপরও ড. ইউনূসের প্রথম বিদেশ সফর বেশ ফলপ্রসূ হয়েছে, যা নয়াদিল্লির জন্য অস্বস্তি বাড়িয়েছে। ভারতের শীর্ষস্থানীয় বাংলা গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে এমনটিই বলা হয়েছে।

জাতিসংঘে ভাষণ দিচ্ছেন ড. ইউনূস

ওই প্রতিবেদনের শুরুতেই দাবি করা হয়, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়ন রুখতে অন্তর্বর্তী সরকার উপযুক্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলেই ড. ইউনূস চাইলেও জাতিসংঘের সাধারণ সম্মেলনে তার সঙ্গে বৈঠক এড়িয়ে গেছেন নরেন্দ্র মোদি। তবে মোদির সঙ্গে বৈঠক না হলেও যুক্তরাষ্ট্রের হৃদ্যতাপূর্ণ সমর্থন নিয়ে সফলভাবেই আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। বিষয়টি দিল্লির আশঙ্কা বাড়িয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতিসংঘের সাধারণ সম্মেলনে নিজে বাংলায় বক্তৃতা দেওয়ার পাশাপাশি বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে বৈঠক করেছেন ড. ইউনূস। এর পাশাপাশি ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট, বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান ও এডিবির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গেও পৃথকভাবে বৈঠকে বসেছেন তিনি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূস

দিল্লি মনে করছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এই সব আলোচনা-বৈঠকের মূল সূর একটাই। আর তা হচ্ছে- শেখ হাসিনা-পরবর্তী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি পশ্চিমা দুনিয়ার পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা নিশ্চিত করা। যে সমর্থন-সহযোগিতার মধ্যে কৌশলগত, বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক ভূমিকাও রয়েছে জোরদারভাবে। আন্তর্জাতিক এই সম্পর্ক তৈরি ও মেরামতের মধ্যে ভারতের প্রতি বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক নির্ভরতার ক্ষেত্র কমিয়ে আনাই ইউনূস সরকারের লক্ষ্য কিনা সেই প্রশ্নও জেগেছে দিল্লির কূটনৈতিক মহলে।

এদিকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস কেবল পশ্চিমা বিশ্ব ও অর্থনৈতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেই ক্ষ্যান্ত হননি। তিনি আলোচনায় বসেছেন ভারতের দুই আঞ্চলিক শত্রু পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-র সঙ্গেও। মূলত সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া সার্ককে জাগিয়ে তোলার পাশাপাশি বাংলাদেশ-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে পুনরুজ্জীবিত করা নিয়ে আলোচনা করেন ইউনূস-শরিফ।

এদিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামীর সাম্প্রতিক অবস্থানও দিল্লির দৃষ্টি এড়ায়নি। তারা মনে করছে, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার তাদের নীতির কেন্দ্রে আরও বেশি করে ইসলামপন্থী এই দলটিকে রাখতে চাইছে। এ বিষয়টিও ভারতের জন্য স্বস্তিদায়ক নয়। এছাড়া এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কাছে আওয়ামী লীগ সরকারের পরিবর্তে অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক বৈধতা পেয়ে গেছে। আবার ঢাকা-ইসলামাবাদ যে সম্পর্ক গড়ে উঠতে যাচ্ছে, তা নিয়ন্ত্রণ করার মতো পরিস্থিতি বা অস্ত্র কোনোটাই এ সময়ে নয়াদিল্লির হাতে নেই। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ তথা অন্তর্বর্তী সরকার এই মুহূর্তে ভারতের জন্য মহা দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।