পেঁয়াজের দাম ফের ১৫০ টাকা কেজি!

রাজধানীর বাজারগুলোতে দেশি পেঁয়াজের দাম আবারও কেজিপ্রতি ১৫০ টাকায় পৌঁছেছে। রাজধানীর বাইরের কিছু শহরে এই দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬৫ টাকা পর্যন্ত। এর ফলে নিম্ন ও স্থির আয়ের মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।

পেঁয়াজের ছবি

গত নভেম্বরেও দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ১৫০ টাকা ছিল। এরপর দাম কিছুটা কমলেও, গত কয়েকদিন ধরে আবারও ঊর্ধ্বমুখী। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই, যার ফলে দাম বেড়েই চলেছে।

পল্লবী এক্সটেনশনের একজন মুদি দোকানি মুজাহিদুল ইসলাম জানান, এক সপ্তাহ ধরে দেশি পেঁয়াজের দাম ধীরে ধীরে বাড়ছে। আজ তিনি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের উপরে রয়েছে। এরই মধ্যে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি সাধারণ মানুষের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে।

ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, আজ রাজধানীর বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে, যা গত সপ্তাহে ছিল ১১০ থেকে ১৩০ টাকা।

অন্যদিকে, টিসিবি'র তথ্য অনুযায়ী, আমদানি করা পেঁয়াজের দাম আজ ৮০ থেকে ১২০ টাকা, যা গত সপ্তাহের তুলনায় ৪.৭৬ শতাংশ কম।

টিসিবি’র তথ্যে দেখা যায়, গত এক বছরে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৪০ শতাংশ এবং আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২৫ শতাংশ।

শ্যামবাজার পেঁয়াজ আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ জানান, আজ পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা কেজি দরে, যা গত সপ্তাহে ছিল ১২০ থেকে ১২৫ টাকা।

তিনি বলেন, চাহিদার তুলনায় মাত্র ২০ থেকে ২৫ শতাংশ পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে, যার কারণে দাম এত বেশি বেড়েছে।

মজিদের বিশ্বাস, নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসার পর আগামী তিন মাসের মধ্যে দাম কমে যাবে।

কৃষি মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, এ বছর বাংলাদেশে ৩৪ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। যদিও এই পরিমাণ পেঁয়াজ দেশের চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট, কিন্তু মন্ত্রণালয় বলছে যে, স্থানীয় ফসলের বেশিরভাগই শীতল ভান্ডারের অভাবে নষ্ট হয়ে যায়। তাই আরও ৬ থেকে ৭ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হবে।

তবে, শ্যামবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, ফেব্রুয়ারিতে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ফসলের ক্ষতি হওয়ায়, স্থানীয় উৎপাদন কৃষি মন্ত্রণালয়ের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ কম হয়েছে।

দেশের সবচেয়ে বড় পেঁয়াজ উৎপাদনকারী অঞ্চল পাবনার খুচরা বাজারে গত পাঁচ দিনে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫০ টাকা।

এছাড়াও, একই সময়ে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা।

সোমবার দুপুরে জেলার বৃহত্তম খুচরা বাজার, পাবনার বড় বাজারে, প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

বাজারের একজন বিক্রেতা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ টাকা করে দাম বাড়ছে।

একই শহরের পুষ্পপাড়া বাজারের একজন পাইকারি ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম বলেন, গত পাঁচ-ছয় দিনে প্রতি মণ (প্রায় ৩৭ কেজি) স্থানীয় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২,০০০ টাকা।

তিনি বলেন, গত সোমবার তারা ৫,৬০০ থেকে ৬,০০০ টাকা মণ দরে পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন।

বগুড়ার মসলা গবেষণা কেন্দ্রের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নূর আলম চৌধুরী ২৫ অক্টোবর জানান, অক্টোবরে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম সাধারণত ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়।

তিনি বলেন, ‘এর কারণ হলো, অনেক কৃষক শীতকালীন জাতের পেঁয়াজ রোপণ করেন, যা ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে বাজারে বিক্রি করা হবে। এজন্য অনেক কৃষক পুরাতন পেঁয়াজ ব্যবহার করে বীজ তৈরি করেন।’

তিনি আরও জানান, এর ফলে প্রতিবছর অক্টোবর মাসে পেঁয়াজের চাহিদা বেড়ে যায়।

ডেইলি স্টার অবলম্বনে