পুতিন: রাশিয়ার নতুন ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে পারবে না পশ্চিমা বিশ্ব

রাশিয়া বৃহস্পতিবার ইউক্রেনে একটি নতুন মধ্যম-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছেন, এটি ইউক্রেন কর্তৃক রাশিয়ার অভ্যন্তরে আঘাত হানতে সক্ষম আমেরিকান ও ব্রিটিশ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের জবাবে করা হয়েছে।

ভ্লাদিমির পুতিন

টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে রুশ প্রেসিডেন্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, আমেরিকান বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এই নতুন ক্ষেপণাস্ত্র, যা ‘ওরেশনিক’ (রাশিয়ান ভাষায় হ্যাজেলনাট গাছ) নামে পরিচিত, ঠেকাতে সম্পূর্ণ অপারগ। তিনি দাবি করেছেন, এটি শব্দের গতির দশগুণ বেগে ছুটতে পারে। পুতিন আরও জানান, যেসব দেশের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ইউক্রেন রাশিয়ার ওপর হামলা করবে, তাদের বিরুদ্ধেও এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হবে।

‘আমাদের বিশ্বাস, যারা আমাদের স্থাপনার ওপর হামলা করতে তাদের অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিচ্ছে, তাদের সামরিক স্থাপনার বিরুদ্ধে আমাদের অস্ত্র ব্যবহার করার অধিকার আমাদের আছে,’ প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেনকে রাশিয়ার ভেতরে সীমিত লক্ষ্যবস্তুতে আমেরিকান এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার পর পুতিন প্রথমবারের মতো এ বিষয়ে মন্তব্য করলেন।

পেন্টাগনের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি সাব্রিনা সিং নিশ্চিত করেছেন যে, রাশিয়ার নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্রটি আরএস-২৯ রুবেঝ আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের ওপর ভিত্তি করে তৈরি একটি নতুন পরীক্ষামূলক মধ্যম-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র।

‘এটি যুদ্ধক্ষেত্রে মোতায়েন করা এক নতুন ধরনের প্রাণঘাতী অস্ত্র, যা নিশ্চিতভাবেই উদ্বেগের বিষয়,’ বলেন সিং। তিনি উল্লেখ করেন, ক্ষেপণাস্ত্রটিতে প্রচলিত বা পারমাণবিক উভয় ধরনের ওয়ারহেড বহন করা সম্ভব। পারমাণবিক ঝুঁকি হ্রাস চ্যানেলের মাধ্যমে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পূর্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অবহিত করা হয়েছিল বলেও তিনি জানান।

পুতিন বলেন, ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে মঙ্গল ও বুধবার দীর্ঘ-পাল্লার আমেরিকান ও ব্রিটিশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাবে মধ্য ইউক্রেনের দ্‌নিপ্রো শহরে রাশিয়া এই হামলা চালায়। ঐ হামলায় রাশিয়ার ব্রায়ানস্ক অঞ্চলে একটি গোলাবারুদের ডিপোতে আগুন লাগে এবং কুর্স্ক অঞ্চলে কিছু নিরাপত্তা কর্মী নিহত ও আহত হয়।

‘আক্রমণাত্মক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পেলে, আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে এবং সমানভাবে প্রতিশোধ নেব,’ রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন। পশ্চিমা নেতারা যারা মস্কোর বিরুদ্ধে তাদের বাহিনী ব্যবহারের পরিকল্পনা করছেন তাদের ‘এ বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে ভাবা উচিত’ লেও তিনি যোগ করেন।

পুতিন জানান, বৃহস্পতিবার নিক্ষিপ্ত ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্র দ্‌নিপ্রোতে একটি সুপরিচিত ক্ষেপণাস্ত্র কারখানায় আঘাত হেনেছে। তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আরও হামলা চালালে নাগরিকদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য রাশিয়া আগাম সতর্কতা জারি করবে - যা পূর্বের বিমান হামলার আগে মস্কো করেনি।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ প্রাথমিকভাবে বলেন, রাশিয়া নতুন ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অবহিত করেনি, কারণ এমন করার কোন বাধ্যতা নেই। তবে পরে তিনি তার বক্তব্য পরিবর্তন করে বলেন, ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের ৩০ মিনিট আগে মস্কো সতর্কবার্তা জারি করেছিল।

ইউক্রেন দাবি করার কয়েক ঘণ্টা পর পুতিনের এই ঘোষণা আসে যে, রাশিয়া দ্‌নিপ্রোতে আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। স্থানীয় কর্মকর্তাদের মতে, এই হামলায় দুইজন আহত হন এবং একটি শিল্প কারখানা ও প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসন কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে আমেরিকান কর্মকর্তারা বলছেন, প্রাথমিক মূল্যায়নে মনে হচ্ছে এটি মধ্যম-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি টেলিগ্রামে লিখেছেন, এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার যুদ্ধের মাত্রা ও বর্বরতার স্পষ্ট ও গুরুতর বৃদ্ধি, জাতিসংঘের সনদের ঘৃণ্য লঙ্ঘন’।

তিনি আরও বলেন, ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে কোন শক্তিশালী বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া’ দেখা যায়নি, যা তার মতে অন্যান্য দেশের জন্যও হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।

"পুতিন এ বিষয়ে অত্যন্ত সংবেদনশীল। তিনি আপনাদের পরীক্ষা নিচ্ছেন, প্রিয় অংশীদারগণ,’  জেলেনস্কি লিখেছেন। ‘রাশিয়ার কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে যদি কোন কঠোর প্রতিক্রিয়া না থাকে, তবে তার অর্থ তারা মনে করবে এই ধরনের কর্মকাণ্ড সম্ভব।’

এই হামলা চালানো হয়েছে এমন এক সময়ে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার অভ্যন্তরে আমেরিকান নির্মিত দীর্ঘ-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইউক্রেনের ওপর থেকে কিছু নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেছে এবং পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সীমা কমিয়ে আনছেন।

ইউক্রেনের বিমান বাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, দ্‌নিপ্রো হামলা চালানো হয়েছে ক্যাস্পিয়ান সাগরের তীরে রাশিয়ার আস্ট্রাখান অঞ্চল থেকে।

‘আজ আমাদের উন্মাদ প্রতিবেশী আবার প্রমাণ করেছে সে আসলে কী,’ পুতিনের ভাষণের কয়েক ঘণ্টা আগে জেলেনস্কি বলেন। ‘এবং সে কতটা ভীত।’