ইউক্রেনে শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের আহ্বান জানালেন পুতিন, সেনাবাহিনী ধ্বংসের হুমকি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে একটি ‘অন্তর্বর্তী প্রশাসন’ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন এবং ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির জন্য ইউক্রেনকে চাপ দিচ্ছেন, ঠিক সেই সময় রাশিয়ার পক্ষ থেকে এই কঠোর বক্তব্য এসেছে।

জেলেনস্কিকে সরিয়ে অন্তর্বর্তী প্রশাসন প্রতিষ্ঠান আহ্বান জানান পুতিন

ট্রাম্পের পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর ওয়াশিংটন ও মস্কোর সম্পর্কের উন্নতি এবং ইউক্রেনকে সহায়তা বন্ধের মার্কিন হুমকি পুতিনকে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা এই যুদ্ধে উভয় পক্ষের হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে সরিয়ে মস্কো-সমর্থিত সরকার প্রতিষ্ঠার দীর্ঘদিনের ইচ্ছা পুতিনের এই নতুন আহ্বানের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়েছে। শুক্রবার (২৮ মার্চ) আর্কটিক ফোরামের ফাঁকে দেওয়া এক বক্তৃতায় পুতিন বলেন, রাশিয়া জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং মস্কোর মিত্রদের সঙ্গে ইউক্রেনে একটি অন্তর্বর্তী প্রশাসন প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত।

এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ইউক্রেন গণতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে, যার মাধ্যমে জনগণের আস্থা অর্জনকারী একটি যোগ্য সরকার ক্ষমতায় আসবে এবং পরবর্তীতে এই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শান্তি চুক্তির আলোচনা শুরু হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

২০২২ সালে ইউক্রেন আক্রমণের শুরুতেই রাশিয়া কিয়েভ দখল করতে চেয়েছিল, কিন্তু ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী তাদের প্রতিহত করতে সক্ষম হয়। পুতিন এবার প্রকাশ্যে ইউক্রেনের জেনারেলদের জেলেনস্কিকে অপসারণের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বারবার জেলেনস্কিকে ‘নব্য-নাৎসি’ এবং ‘মাদকাসক্ত’ বলে অভিযোগ করেছেন, যদিও এর কোনো প্রমাণ দেওয়া হয়নি।

মস্কো জেলেনস্কির আইনগত বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে, কারণ তার পাঁচ বছরের মেয়াদ ২০২৪ সালের মে মাসে শেষ হয়ে গেছে। ইউক্রেনের আইন অনুযায়ী, বড় সামরিক সংঘাতের সময় নির্বাচন স্থগিত থাকে এবং জেলেনস্কির বিরোধী ও সমালোচকরাও বলছেন, যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন হওয়া উচিত নয়।

সমালোচকদের মতে, ২৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা এবং বারবার প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচনে জয়ী হওয়া পুতিন যুদ্ধের সময়কালে ইউক্রেনকে গণতন্ত্রহীন দেশ হিসেবে অভিযুক্ত করেছেন।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ইউক্রেনের নেতৃত্ব সেনাবাহিনীর ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে বলেই এমন কথা বলা হয়েছে। তিনি ইউক্রেনীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিদিন রাশিয়ার শক্তি স্থাপনায় হামলা চালানোর অভিযোগও করেছেন।

তবে কিয়েভ পাল্টা দাবি করেছে, রাশিয়া নিজেই বারবার এই নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করেছে। শুক্রবার ইউক্রেনের বিমানবাহিনী জানায়, রাশিয়া রাতারাতি ১৬৩টি ড্রোন হামলা চালিয়েছে, যার ফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অবকাঠামো ও কৃষিক্ষেত্রে আগুন লেগে যায়।

যুদ্ধক্ষেত্রে নতুন অগ্রগতির দাবি করে রাশিয়া জানিয়েছে, তারা উত্তর-পূর্ব খারকিভ অঞ্চলের একটি গ্রাম দখল এবং নিজেদের কুর্স্ক অঞ্চলের একটি সীমান্ত শহর পুনর্দখল করেছে। পুতিন তার সেনাদের সংখ্যা ও অস্ত্রের সুবিধা কাজে লাগানোর নির্দেশ দিয়েছেন। শুক্রবার তিনি বলেন, ‘আমি আগেই বলেছি, আমরা তাদের ধ্বংস করে দেবো। এটা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে। আমরা ধীরে ধীরে কিন্তু দৃঢ়ভাবে আমাদের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।’