বাড়ছে উত্তেজনা, ভারতীয় সেনাকে ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিলেন মোদি

ভারত অধিকৃত কাশ্মিরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর ভয়াবহ সশস্ত্র হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এই হামলার কঠোর জবাব দিতে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীকে ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) নয়াদিল্লিতে এক উচ্চপর্যায়ের নিরাপত্তা বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অন্যদিকে, সীমান্তেও উত্তেজনা তুঙ্গে, গত পাঁচ রাত ধরে চলছে দুপক্ষের মধ্যে গোলাগুলি। খবর দ্য হিন্দু ও ডনের।

মোদির বৈঠক

মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী মোদির সভাপতিত্বে তার বাসভবনে অনুষ্ঠিত এই জরুরি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং তিন বাহিনীর প্রধানসহ (সেনা, নৌ ও বিমান) শীর্ষ সামরিক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা।

বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী মোদির বরাত দিয়ে জানানো হয়, পেহেলগাম হামলার জবাব কবে, কোথায় এবং কীভাবে দেওয়া হবে, সেই সিদ্ধান্ত ভারতীয় সেনাবাহিনীই নেবে। সেনাবাহিনীর দক্ষতা ও শক্তির ওপর তিনি পূর্ণ আস্থা রাখছেন বলেও বৈঠকে স্পষ্ট করেন প্রধানমন্ত্রী।

এর আগে মোদি তার ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানেও পাকিস্তানকে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন। এবার সশস্ত্র বাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়ায় নতুন করে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এর জল্পনা তীব্র হয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর ভারত পাকিস্তানের বালাকোটে ঢুকে বিমান হামলা চালিয়েছিল। পেহেলগামের ঘটনার পরও একই ধরনের সামরিক প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলে কূটনৈতিক মহল আশঙ্কা করছে।

এদিকে, নিয়ন্ত্রণরেখা (লাইন অফ কন্ট্রোল) বরাবর উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। গত পাঁচ রাত ধরে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে থেমে থেমে গোলাগুলি চলার খবর পাওয়া গেছে। পাকিস্তান মঙ্গলবার ভারতের একটি নজরদারি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করে বলেছে, সীমান্তে যেকোনো আগ্রাসনের জবাব দিতে তারা সম্পূর্ণ প্রস্তুত।

পেহেলগাম হামলার পর ভারত কাশ্মিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। সন্দেহভাজনদের ধরতে ব্যাপক চিরুনি অভিযান শুরু হয়েছে, যাতে প্রায় দুই হাজার জনকে আটক করা হয়েছে এবং কয়েকটি বাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে বলে জানা গেছে। স্থানীয় প্রশাসন কাশ্মিরের ৮৭টি পর্যটনকেন্দ্রের মধ্যে ৪৮টি বন্ধ ঘোষণা করেছে এবং বাকিগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করেছে।

গত ২২ এপ্রিল পেহেলগাম হামলার পর থেকেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত একের পর এক কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদি ভিসা ছাড়া পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য সব ধরনের ভিসা বাতিল করা হয়েছে। ঐতিহাসিক সিন্ধু পানিচুক্তি বাতিলের সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। ভারতের এসব পদক্ষেপে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে পাকিস্তান আকাশপথ বন্ধ, শিমলা চুক্তি বাতিলসহ পাল্টা পদক্ষেপের হুমকি দিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে যাওয়ার কথাও বলেছে।

আন্তর্জাতিক মঞ্চেও বাগযুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে। জাতিসংঘে ভারতের প্রতিনিধি পাকিস্তানকে ‘দুর্বৃত্ত রাষ্ট্র’ আখ্যা দিয়েছেন। অন্যদিকে, পাকিস্তান বেলুচিস্তানের জাফর এক্সপ্রেসে সাম্প্রতিক হামলায় ভারতের হাত থাকার পাল্টা অভিযোগ তুলেছে।

সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতির দিকে যাচ্ছে। কাশ্মিরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে এবং সীমান্তে উভয় দেশের সামরিক তৎপরতা নতুন সংঘাতের ইঙ্গিত দিচ্ছে। দুটি পরমাণু শক্তিধর দেশের এমন মুখোমুখি অবস্থানে আন্তর্জাতিক মহলেও গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।