বাণিজ্য যুদ্ধের নতুন মোড়: চীন-হংকংয়ের স্বল্পমূল্যের আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা বাতিল করল যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্র শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে চীন এবং হংকং থেকে আসা স্বল্পমূল্যের আমদানির ক্ষেত্রে ‘ডি মিনিমিস’ নামক শুল্ক অব্যাহতি সুবিধা বাতিল করেছে। এই পদক্ষেপকে যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য যুদ্ধের সর্বশেষ উত্তেজনা বৃদ্ধি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সম্পাদিত ছবি

পূর্বে, এই অব্যাহতির আওতায় ৮০০ ডলারের কম মূল্যের চালান কোনো শুল্ক ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারত। গত ২ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বাক্ষরিত এক নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে এই সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়।

হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, এই পদক্ষেপের লক্ষ্য হলো ফেন্টানিলের মতো সিন্থেটিক ওপিওডের অবৈধ প্রবাহ ঠেকানো এবং একটি ‘আইনি ফাঁক’ বন্ধ করা। ট্রাম্প এই ফাঁকটিকে মার্কিন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য ক্ষতিকর একটি ‘কেলেঙ্কারি’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন।

চলতি সপ্তাহের শুরুতে মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে ট্রাম্প বলেন, ‘এটি আমাদের দেশের বিরুদ্ধে, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলোর বিরুদ্ধে চলমান একটি বড় ধরনের কেলেঙ্কারি। এবং আমরা এটি বন্ধ করে দিয়েছি, আমরা এর অবসান ঘটিয়েছি।’

এখন থেকে চীন ও হংকং থেকে আসা আমদানিকৃত পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করা হবে এবং সেগুলোর জন্য প্রযোজ্য সমস্ত শুল্ক পরিশোধ করতে হবে।

ধারণা করা হচ্ছে, এই সিদ্ধান্তের ফলে শেইন, টেমু এবং অ্যামাজনের থার্ড-পার্টি বিক্রেতাদের মতো ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই প্ল্যাটফর্মগুলো পূর্বে শুল্ক এড়ানোর জন্য এই আইনি ফাঁকটি ব্যবহার করত।

চীন থেকে আসা পণ্যের ওপর এখন ১৪৫% পর্যন্ত শুল্ক আরোপ হতে পারে।

বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা সিবিএস নিউজকে জানিয়েছেন, এই পদক্ষেপ মার্কিন কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন (সিবিপি)-এর ওপর একটি নতুন বোঝা চাপিয়েছে। সিবিপিকে এখন প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ অতিরিক্ত পার্সেল পরীক্ষা করতে হবে, যার ফলে পণ্য চালান পৌঁছাতে বিলম্ব এবং প্রশাসনিক জটিলতা দেখা দিতে পারে।

পাবলিকান নামক সংস্থার সিইও রাম বেন জিওন সংবাদ মাধ্যমটিকে বলেন, ‘আমরা যেভাবে অনলাইনে কেনাকাটা করি, তা আর আগের মতো থাকবে না।’

উল্লেখ্য, ১৯৩০ সালের ট্যারিফ অ্যাক্টের ৩২১ ধারা অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট সর্বনিম্ন মূল্যের (ডি মিনিমিস থ্রেশহোল্ড) কম মূল্যের আমদানি পণ্য কোনো শুল্ক, ফি বা কর ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি পেত। ২০১৬ সালে কংগ্রেস এই সীমা প্রতি চালানে ২০০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৮০০ ডলার করেছিল।

কংগ্রেসনাল রিসার্চ সার্ভিসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীন থেকে স্বল্পমূল্যের ব্যক্তিগত পার্সেল রপ্তানি ২০১৮ সালের ৫.৩ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২০২৩ সালে ৬৬ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।