গাজায় সাহায্য বিতরণে মার্কিন নিরাপত্তা ঠিকাদার নিয়োগের পরিকল্পনা, জাতিসংঘ ও হামাসের তীব্র বিরোধিতা

ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা গাজায় যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনিদের জন্য মার্কিন নিরাপত্তা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মানবিক সহায়তা বিতরণের একটি বিতর্কিত পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। তবে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ও ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠন হামাস এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছে। ইসরায়েলি ও মার্কিন মিডিয়ার বরাত দিয়ে সোমবার আনাদোলু এজেন্সি এ খবর জানিয়েছে।

গাজার একটি দৃশ্য

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল জানায়, এই পরিকল্পনা অনুযায়ী মার্কিন নিরাপত্তা ঠিকাদার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সরাসরি গাজাবাসীর হাতে সহায়তা পৌঁছে দেবে। এতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সরাসরি সম্পৃক্ততা না থাকলেও, তারা ত্রাণ বিতরণের সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

খবরে বলা হয়েছে, পরিকল্পনাটি মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্যের সমর্থন পেলেও কট্টর ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির এর বিরোধিতা করেছেন। পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের জন্য এখনো কোনো নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা হয়নি, তবে মে মাসের মাঝামাঝি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য মধ্যপ্রাচ্য সফরের সময় এটি কার্যকর হতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

জাতিসংঘসহ কয়েক ডজন আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, এটি মানবিক নীতির লঙ্ঘন, বাস্তবায়ন অযোগ্য এবং এটি ফিলিস্তিনি বেসামরিক জনগণ ও সাহায্যকর্মীদের মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।

গাজায় জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা দল এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা কেবল এমন পরিকল্পনাই সমর্থন করতে পারে যা মানবতা, নিরপেক্ষতা, স্বাধীনতা ও পক্ষপাতহীনতার মতো মানবিক নীতিমালা কঠোরভাবে মেনে চলে।

ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠন হামাস এই পরিকল্পনাকে ‘রাজনৈতিক ব্ল্যাকমেইল ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। জাতিসংঘের অবস্থানকে স্বাগত জানিয়ে হামাস আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি ইসরায়েলের ‘মিথ্যা প্রচারণায়’ বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

প্রসঙ্গগত, গত ২ মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজার সব প্রবেশপথ বন্ধ করে দেওয়ায় যুদ্ধবিধ্বস্ত এই অঞ্চলে দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের প্রধান ইসমাইল থাওয়াবতা গত সপ্তাহে আনাদোলু এজেন্সিকে বলেছেন, সীমান্ত বন্ধ ও ইসরায়েলি সামরিক হামলার কারণে গাজা এখন ‘দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে’।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় এখন পর্যন্ত ৫২ হাজার ৫০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত (আইসিসি) ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করে। এছাড়া, গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের কারণে দেশটির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতেও (আইসিজে) গণহত্যার মামলা চলমান রয়েছে।