ইসরায়েলি হামলায় গাজার শেষ ক্যান্সার হাসপাতালটিও বন্ধ

ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত হামলায় গাজায় ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসার শেষ আশ্রয়স্থল ইউরোপীয় হাসপাতালটিও তার কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এই ভয়াবহ খবর জানিয়েছে। এই ঘটনায় উপত্যকার ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীরা চরম অনিশ্চয়তা ও আরও গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে পড়েছেন।

ছবি - সংগৃহীত

মন্ত্রণালয় তাদের বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে, ‘ইসরায়েলি বাহিনী হাসপাতালটিকে সরাসরি লক্ষ্যবস্তু করায় চিকিৎসা কর্মী এবং সেখানে আশ্রয় নেওয়া রোগীদের জীবন চরম বিপন্ন হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসা পরিষেবা অব্যাহত রাখা সম্পূর্ণ অসম্ভব।’

বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, এর আগে গাজার তুর্কি-ফিলিস্তিনি বন্ধুত্ব হাসপাতালটি ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। এরপর থেকে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসে অবস্থিত ইউরোপীয় হাসপাতালটিই ছিল গাজার ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসা পাওয়ার একমাত্র ভরসাস্থল।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, এই হাসপাতাল বন্ধ হয়ে যাওয়ার অর্থ হলো ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীরা তাদের চিকিৎসার ধারাবাহিকতা থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত হবেন এবং তাদের শারীরিক অবস্থা আরও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে চলে যাবে।

জানা গেছে, সম্প্রতি ইসরায়েলি হামলায় হাসপাতালটির মূল অবকাঠামো, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ এবং হাসপাতালে পৌঁছানোর প্রধান সড়কগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত মোট ৩৮টি হাসপাতাল, ৮১টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ১৬৪টি চিকিৎসা পরিষেবা কেন্দ্র হয় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে, পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে অথবা অকার্যকর হয়ে পড়েছে।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাস থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক নির্মম ও বিধ্বংসী অভিযান পরিচালনা করে আসছে। এই অভিযানে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৩,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের একটি বড় অংশই নারী ও শিশু।

গাজায় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গত বছরের নভেম্বরে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। এছাড়া, গাজা উপত্যকায় চলমান এই সামরিক অভিযানের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও (আইসিজে) গণহত্যার অভিযোগে বিচারের সম্মুখীন হচ্ছে।