অ্যাডিডাস ও পুমার জন্মরহস্য: দুই ভাইয়ের ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব নিয়ে টিভি সিরিজ

১৯৪০-এর দশকে জার্মানির এক ছোট শহরে দুই ভাইয়ের তিক্ত সম্পর্কের জেরে জন্ম নেয় বিশ্ববিখ্যাত দুটি স্পোর্টস শু ব্র্যান্ড – অ্যাডিডাস ও পুমা। সেই ঐতিহাসিক পারিবারিক দ্বন্দ্বের অজানা কাহিনী এবার আসছে টেলিভিশন পর্দায়। রোববার (১৮ মে) প্রযোজনা সংস্থা এ ঘোষণা দিয়েছে বলে জানিয়েছে আরব নিউজ।

অ্যাডিডাস ও পুমা

হলিউডভিত্তিক প্রযোজনা সংস্থা ‘নো ফ্যাট ইগো’ এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। অ্যাডিডাসের প্রতিষ্ঠাতা আডলফ ‘আডি’ ডাসলারের পরিবারও এতে সমর্থন জানিয়েছে। সিরিজটি ব্যবসায়িক ইতিহাসের অন্যতম চাঞ্চল্যকর ভ্রাতৃবিদ্বেষের গল্প বলবে, যেখানে আডি ডাসলারের বিপরীতে ছিলেন তারই ভাই রুডলফ (রুডি) ডাসলার, যিনি পুমা প্রতিষ্ঠা করেন।

নেটফ্লিক্সের জনপ্রিয় সিরিজ ‘ওজার্ক’-এর লেখক মার্ক উইলিয়ামস এই প্রকল্পের চিত্রনাট্য লিখছেন। তিনি ডাসলার পরিবারের হোম ভিডিও, স্মৃতিচিহ্ন ও বিভিন্ন স্মারক ঘেঁটে গল্পের রূপ দিচ্ছেন। কান চলচ্চিত্র উৎসবে এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে উইলিয়ামস বলেন, ‘সবাই অ্যাডিডাস ও পুমার ব্র্যান্ড চেনে, কিন্তু এর পেছনের গল্প অনেকেরই অজানা।’ তার মতে, ‘এটি হবে একাধিক প্রজন্ম ধরে বিস্তৃত এক পারিবারিক উত্তরাধিকারের ড্রামা।’

সিরিজটির জন্য এখনও কোনো স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম চূড়ান্ত হয়নি। ‘নো ফ্যাট ইগো’ সম্পূর্ণ সৃজনশীল স্বাধীনতা নিয়ে সিরিজটি নির্মাণের পর বিভিন্ন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের কাছে তা উপস্থাপন করবে।

প্রযোজনা সংস্থার প্রধান নিলস জুল জানান, আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গ অ্যাথলিট জেসি ওয়েন্সের সঙ্গে অ্যাডিডাসের সহযোগিতার ঘটনা জানার পরই তিনি এই প্রকল্পে আগ্রহী হন। অ্যাডিডাসের তৈরি স্পাইক জুতা পরেই ওয়েন্স ১৯৩৬ সালের বার্লিন অলিম্পিকসে তারকাখ্যাতি অর্জন করেছিলেন, যেখানে হিটলার জার্মান শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। জুল বলেন, ‘আমরা চাই মার্ক সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে তার কাজ করতে পারেন।’ এই সিরিজ বিশ্বজুড়ে দর্শকদের কাছে অ্যাডিডাস-পুমার কিংবদন্তি প্রতিদ্বন্দ্বিতার অজানা অধ্যায় উন্মোচন করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

উইলিয়ামস স্বীকার করেছেন, সিরিজের সবচেয়ে স্পর্শকাতর দিক হবে দুই ভাইয়ের নাৎসি আমলের ভূমিকা। ১৯৩০-এর দশকে ব্যবসায়িক স্বার্থে তারা দুজনেই নাৎসি পার্টির সদস্য হয়েছিলেন, যা তৎকালীন প্রেক্ষাপটে প্রায় বাধ্যতামূলক ছিল। রুডি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সৈনিক হিসেবে যোগ দেন এবং পরবর্তীতে মিত্র বাহিনীর হাতে আটক হন। অন্যদিকে, আডি জার্মানিতে থেকে কোম্পানি বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করেন। যুদ্ধের সময় তাদের কারখানা বাজেয়াপ্ত করে অস্ত্র তৈরির কাজে লাগানো হয়েছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে দুই ভাই যৌথভাবে পারিবারিক জুতার ব্যবসা পরিচালনা করতেন। কিন্তু যুদ্ধের সময় তাদের সম্পর্কে ফাটল ধরে এবং যুদ্ধের পর এই বিভেদ এতটাই প্রকট হয় যে, তাদের কেন্দ্র করে নিজ শহর হার্জোজেনআউরাখও কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। সেই বিভক্তির রেশ আজও শহরটিতে বিদ্যমান – এক পক্ষ অ্যাডিডাসের, অন্যপক্ষ পুমার।