সিরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুললো যুক্তরাষ্ট্র

সিরিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এ বিষয়ে শুক্রবার একটি আদেশ জারি করেছে। চলতি মাসের শুরুতে সিরিয়া ইস্যুতে ট্রাম্পের আকস্মিক নীতিগত পরিবর্তনের পর এ ঘোষণা এলো। এতে সিরিয়ায় নতুন বিদেশি বিনিয়োগ, আর্থিক পরিষেবা ব্যবস্থা এবং সিরিয়ার পেট্রোলিয়াম পণ্য সম্পর্কিত লেনদেন সহজ হবে। খবর বিবিসি ও আল জাজিরার।

রিয়াদে ফররত ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সিরিয়ার নতুন নেতা আল শারা

মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের জারি করা আদেশে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রশাসন সিরিয়ার বিভিন্ন ব্যক্তি এবং সত্তার জন্য মুক্তি ঘোষণা করেছে। এর ফলে দেশটিতে ‘ট্রাম্পের ফার্স্ট আমেরিকা’ কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নতুন বিনিয়োগ এবং বেসরকারি খাতের কার্যকলাপ চালু হবে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর একই সঙ্গে ২০১৯ সালে প্রণীত ‘সিজার সিরিয়া বেসামরিক সুরক্ষা আইন’ থেকে দেশটিতে অব্যাহতি দেওয়ার ঘোষণা করে বলেছে, আমাদের বিদেশী অংশীদার, মিত্র এবং অঞ্চলকে সিরিয়ায় আরও পদক্ষেপ গ্রহণে এগিয়ে যাবে।

এক বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, এই অব্যাহতি বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পানি এবং স্যানিটেশন সরবরাহকে সহজতর করবে এবং সিরিয়াজুড়ে আরও কার্যকর মানবিক সহায়তা সম্ভব হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও আরও বলেন, আজকের পদক্ষেপগুলো সিরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি নতুন সম্পর্ক গড়তে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপ।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবাক করে দিয়ে ট্রাম্প চলতি মে মাসের মাঝামাঝি মধ্যপ্রাচ্য সফরের সময় সিরিয়ার বর্তমান অন্তর্বর্তী নেতা আল-শারার সঙ্গে বৈঠক করেন এবং ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের আমলে আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলো অপসারণের প্রতিশ্রুতি দেন।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ও অর্থমন্ত্রণালয়ের শুক্রবারের ঘোষণা ট্রাম্পের সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের একটি প্রাথমিক পদক্ষেপ।

মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট এক বিবৃতিতে বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি অনুসারে, ট্রেজারি বিভাগ এবং স্টেট ডিপার্টমেন্ট সিরিয়ায় নতুন বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার জন্য অনুমোদন বাস্তবায়ন করছে। সিরিয়াকেও একটি স্থিতিশীল দেশ হয়ে ওঠার জন্য কাজ চালিয়ে যেতে হবে যেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে। আজকের পদক্ষেপগুলো আশা করা যায় যে দেশটিকে একটি উজ্জ্বল, সমৃদ্ধ এবং স্থিতিশীল ভবিষ্যতের পথে নিয়ে যাবে।

এক যুগের বেশি গৃহযুদ্ধের পর গত বছরের ডিসেম্বরে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আল-আসাদের সরকারের পতন ঘটে এবং বিদ্রোহী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) গোষ্ঠীর প্রধান আল-শারার নেতৃত্বে অভিযানের মুখে আল-আসাদ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। যার ফলে গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটে।

২০১১ সালে প্রথম শুরু হওয়া যুদ্ধ সিরিয়ার অর্থনীতিকে ভেঙে ফেলেছে। ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। এছাড়া উদ্বাস্তু হয়েছেন আরও কয়েক লাখ মানুষ।

সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের তথ্য অনুসারে, সংঘাতের সময় ৬ লাখ ৫৬ হাজার ৪৯৩ জন নিহত হন। এছাড়া জাতিসংঘের মতে, গৃহযুদ্ধের প্রথম আট বছরে দেশটি প্রায় ৪৪২.২ বিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।