গাজার হৃদয়বিদারক ট্রাজেডি: বিমান হামলায় চিকিৎসক দম্পতির ৯ শিশুসন্তান নিহত

ফিলিস্তিনের দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস এলাকায় এক হৃদয়বিদারক ঘটনায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় এক চিকিৎসক দম্পতির নয় শিশুসন্তান নির্মমভাবে প্রাণ হারিয়েছে। শুক্রবার (২৩ মে) চালানো এই হামলায় তাদের বাড়িটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায় এবং বিধ্বংসী আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় আটটি শিশুর দেহ। গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থা এই মর্মান্তিক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে।

ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত গাজার একটি এলাকা

সিভিল ডিফেন্স সংস্থার মুখপাত্র মাহমুদ বাসসাল জানান, ‘ডা. হামদি আল-নাজ্জার এবং তার স্ত্রী ডা. আলা আল-নাজ্জারের বাড়ি থেকে নয়টি শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এই ঘটনায় ডা. হামদি এবং তাদের দশম সন্তান আদম গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।’ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন এই খবর জানিয়েছে।

জানা গেছে, ডা. আলা আল-নাজ্জার গাজা উপত্যকার নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সে শিশু বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত। শুক্রবার সকালে তার স্বামী ডা. হামদি আল-নাজ্জার তাকে কর্মস্থলে পৌঁছে দিয়ে বাড়ি ফেরার কিছুক্ষণ পরই তাদের কিজান আল-নাজ্জার এলাকার বাড়িতে ইসরায়েলি বাহিনী বিমান হামলা চালায়। হামলায় বাড়িটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় এবং আগুন ধরে যায়। সিভিল ডিফেন্সের উদ্ধারকারী দল ধ্বংসস্তূপ থেকে নয়টি মরদেহ উদ্ধার করে, যার মধ্যে আটটিই ছিল পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাওয়া শিশুর দেহ। গুরুতর আহত ডা. হামদিকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে।

সবচেয়ে মর্মান্তিক দৃশ্য ছিল যখন ডা. আলা আল-নাজ্জার নিজেই তার নয় সন্তানের পুড়ে যাওয়া মরদেহ গ্রহণ করেন। সন্তানদের ঝলসে যাওয়া নিথর দেহ দেখে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং তার কান্না কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছিল না। নিহত শিশুদের বয়স ছিল মাত্র ২ থেকে ১২ বছরের মধ্যে। নিহত সন্তানেরা হলো- ইয়াহিয়া, রাকান, রাসলান, জুবরান, ইভ, রিফান, সায়দিন, লুকমান ও সিদরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হাসপাতালে যখন পোড়া মরদেহগুলো পৌঁছায় এবং ডা. আলা তাদের শনাক্ত করেন, সেই দৃশ্য ছিল অবর্ণনীয় কষ্টের।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ডা. মুনির আল-বারশ এই ঘটনা প্রসঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘এই মর্মান্তিক ঘটনা গাজায় চিকিৎসকদের নির্মম বাস্তবতা তুলে ধরে। তারা শুধু হাসপাতালেই নয়, নিজেদের ঘরেও নিরাপদ নন। এমন নির্মমতা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন, এই হত্যাকাণ্ডটি গাজার খান ইউনুসসহ বিভিন্ন এলাকায় গত কয়েক সপ্তাহে চালানো ধারাবাহিক ইসরায়েলি হামলার অংশ, যেখানে শত শত নারী ও শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী নির্দিষ্ট কোনো হামলার বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তবে এক বিবৃতিতে তারা দাবি করেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় ১০০টির বেশি লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালানো হয়েছে। তাদের দাবি, এসব হামলায় সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্য, সামরিক স্থাপনা, ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গপথ এবং অন্যান্য অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু ছিল।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত এক লাখ ৭৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত ও আহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এছাড়া, প্রায় ১৪ হাজার মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে।