গাজায় ৯ শিশুর মৃত্যু, স্বজনের আর্তনাদ: ‘মৃত্যুও কখনো কখনো শ্রেয় মনে হয়’’

গাজার দক্ষিণাঞ্চলে হাসপাতালে আহত শিশুদের সেবায় যখন ব্যস্ত ছিলেন শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আলা নাজ্জার, তখন দুঃস্বপ্নের মতো এক সংবাদ পান তিনি। ইসরায়েলি বিমান হামলায় তার নিজের বাড়িই পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে, যেখানে ছিল তার দশ সন্তান ও তাদের পিতা। এই ঘটনায় তার নয় সন্তান মর্মান্তিকভাবে নিহত হয়েছে এবং স্বামী ও এক সন্তান গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

দুই স্বজনের সঙ্গে ডা. আলা নাজ্জার (বামে)

পরিবারের সদস্যরা জানান, কোনো যানবাহন না পেয়ে ডা. আলা নাজ্জার নাসের হাসপাতাল থেকে অনেকটা পথ দৌড়ে খান ইউনিসে তার বাড়িতে পৌঁছান। সেখানে পৌঁছে যা দেখলেন, তা ছিল যেকোনো মা-বাবার জন্য এক অকল্পনীয় বিভীষিকা। ডা. আলার স্বামীর ভাই আলি নাজ্জার জানান, ‘পুড়ে যাওয়া মরদেহগুলো দেখে তিনি চিৎকার করে কেঁদে ওঠেন।’ স্বজনদের মতে, বোমা হামলায় শিশুদের শরীর এতটাই পুড়ে গিয়েছিল যে, তাদের চেনা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছিল।

হামলায় দশ বছর বয়সী সন্তান আদম প্রাণে বাঁচলেও তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার বাবা, ডা. হামদি আল-নাজ্জারও এখন হাসপাতালের আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। জানা গেছে, জর্ডান ফিল্ড হাসপাতালে ডা. হামদির একাধিক অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। তার ডান ফুসফুসের একটি বড় অংশ কেটে ফেলতে হয়েছে এবং এ পর্যন্ত তাকে ১৭ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, ছেলে আদমের একটি হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং সারা শরীরে গুরুতর পোড়া ক্ষত রয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একসঙ্গে নয় সন্তানকে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে গেছেন ডা. আলা। হামলার পরদিনও তিনি বাড়ির ধ্বংসস্তূপের পাশে একটি তাঁবুর নিচে স্তব্ধ হয়ে বসেছিলেন। তখনও যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার আকাশে ইসরায়েলি হামলার বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছিল।

ডা. আলার আত্মীয়দের দাবি, ‘কোনো ধরনের সতর্কতা ছাড়াই শুক্রবার দুপুরের এ হামলা চালানো হয়।’ তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, ‘সেনাদের কাছাকাছি একটি স্থান থেকে সন্দেহভাজনদের লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। এ হামলায় বেসামরিক হতাহতের দাবি তদন্তাধীন রয়েছে।’

ডা. আলার বোন সাহার নাজ্জার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘কাফনের ভেতরে শিশুদের চিনতে পারিনি। তাদের মুখমণ্ডল আর অবশিষ্ট ছিল না।’ পরিবারের আরেক সদস্য মুহাম্মদ বলেন, ‘এ এক অপূরণীয় ক্ষতি। আলা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছেন।’

ডা. হামদির ভাই আলি নাজ্জার বলেন, ‘ভাইয়ের বাড়িটা ভাঙা বিস্কুটের মতো গুঁড়িয়ে গেছে। আমার প্রিয়জনেরা তার নিচে চাপা পড়েছিল।’ তিনি নিজ হাতে অন্যদের সঙ্গে মিলে ধ্বংসস্তূপ থেকে শিশুদের মরদেহ উদ্ধার করেন। এখন তিনি গভীর শঙ্কায়, জ্ঞান ফিরলে ভাইকে কীভাবে এই মর্মান্তিক দুঃসংবাদ দেবেন। ‘কীভাবে বলব, তোমার সন্তানেরা আর নেই? দুইটি কবরে আমি তাদের সবাইকে দাফন করেছি।’

ক্লান্ত কণ্ঠে তিনি যোগ করেন, ‘গাজায় কোনো নিরাপদ স্থান নেই। এই নির্মমতার চেয়ে মৃত্যুও কখনো কখনো শ্রেয় মনে হয়।’

আরব নিউজ অবলম্বনে