অন্তর্বর্তী সরকারকে জাপানের পূর্ণ সমর্থন, ১০৬ কোটি ডলার সহায়তা ঘোষণা
- Details
- by ২৪ ডেস্ক
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের চলমান সংস্কার কার্যক্রম এবং শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রচেষ্টায় জাপান তার পূর্ণ সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে। একইসঙ্গে, বাজেট সহায়তা, রেলওয়ে খাতের উন্নয়ন এবং শিক্ষাবৃত্তি বাবদ বাংলাদেশকে মোট ১০৬ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার প্রদানের গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দিয়েছে দেশটি।
ছবি - সংগৃহীত
আজ (৩০ মে) জাপানের রাজধানী টোকিওতে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার মধ্যে অনুষ্ঠিত এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এই আর্থিক সহায়তা সংক্রান্ত বিনিময় নোট স্বাক্ষরিত হয়। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের জাপান সফরের তৃতীয় দিনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পর একটি যৌথ প্রেস বিবৃতিও জারি করা হয়। এর আগে গতকাল তিনি ৩০তম নিক্কেই এশিয়া ফোরামে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
ঘোষিত মোট সহায়তার মধ্যে জাপান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংস্কার কার্যক্রম এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় উন্নয়ন নীতি ঋণ হিসেবে ৪১ কোটি ৮০ লাখ ডলার প্রদান করবে। এছাড়া, গুরুত্বপূর্ণ জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী রেললাইনকে ডুয়েল-গেজ ডাবল লাইনে উন্নীত করার প্রকল্পে টোকিও আরও ৬৪ কোটি ১০ লাখ ডলার ঋণ দেবে। শিক্ষাবৃত্তি খাতে অনুদান হিসেবে দেওয়া হবে ৪২ লাখ ডলার।
বৈঠকে উভয় পক্ষ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা স্মারক এবং সহযোগিতা স্মারক স্বাক্ষরকেও স্বাগত জানিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) ওয়ান স্টপ সার্ভিস (ওএসএস) ব্যবস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রিপেইড গ্যাস মিটার স্থাপন প্রকল্প, ব্যাটারিচালিত সাইকেলের কারখানা স্থাপন, তথ্য সুরক্ষার জন্য একটি পাইলট প্রকল্প এবং বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের (বিএসইজেড) সঙ্গে ভূমি চুক্তি।
অধ্যাপক ইউনূস এবং প্রধানমন্ত্রী ইশিবা যত দ্রুত সম্ভব একটি পারস্পরিক সুবিধাজনক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (ইপিএ) সম্পাদনের ওপর বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করেন। তারা নিজ নিজ মন্ত্রণালয় ও আলোচনাকারী দলকে এ বিষয়ে আলোচনা ত্বরান্বিত করার নির্দেশ দেন। এই ইপিএ চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে তা দুই দেশের মধ্যে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বৃদ্ধিতে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের পর জাপানের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকারের পথ সুগম করবে।
বর্তমানে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ৪০০ কোটি ডলার। উল্লেখ্য, স্বাধীনতার পর থেকে জাপান বাংলাদেশকে ২৪ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ঋণ ও অনুদান প্রদান করেছে, যা দেশের মেট্রোরেল, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের (এইচএসআইএ) তৃতীয় টার্মিনাল এবং আড়াইহাজারের অর্থনৈতিক অঞ্চলের মতো গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নির্মাণে সহায়তা করেছে।
রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও জোরদার করার ব্যাপারেও উভয় দেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে। এর আওতায় জাপানের অফিসিয়াল সিকিউরিটি অ্যাসিস্ট্যান্সের (ওএসএ) অধীনে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে দ্রুত পাঁচটি টহল জাহাজ সরবরাহ করার বিষয়টিও রয়েছে। এছাড়া, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি হস্তান্তর সংক্রান্ত একটি চুক্তির বিষয়ে উভয় পক্ষ নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে এবং দ্রুত এই চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।
দক্ষ জনশক্তি বিনিময়সহ জনগণের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। বৃহস্পতিবার, বাংলাদেশি দক্ষ কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও জাপানে নিয়োগের বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীরা ধারণা করছেন, পূর্ব এশিয়ার এই দেশটি শ্রম ঘাটতির সম্মুখীন হওয়ায় আগামী পাঁচ বছরে জাপান কমপক্ষে ১ লাখ বাংলাদেশি দক্ষ কর্মী নিয়োগ করতে পারে। এ প্রসঙ্গে, অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশে মানবসম্পদ উন্নয়নে জাপানের অব্যাহত সহায়তার জন্য, বিশেষ করে মানবসম্পদ উন্নয়ন বৃত্তি প্রকল্পের জন্য প্রধানমন্ত্রী ইশিবাকে ধন্যবাদ জানান।
জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা এবং প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস কৌশলগত অংশীদারিত্বের প্রতি তাদের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। তারা সকলের জন্য শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে একটি মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক (এফওআইপি) অঞ্চলের অভিন্ন লক্ষ্যের কথাও পুনরায় উল্লেখ করেন।
আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি তারা জাতিসংঘ সনদের নীতিমালা সমুন্নত রেখে, আইনের শাসনের ওপর ভিত্তি করে বহুপাক্ষিকতা এবং গণতন্ত্রের প্রতি সমর্থন জানিয়ে এই অঞ্চলে ও এর বাইরে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য সহযোগিতা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নকে উৎসাহিত করার জন্য জাপানের অব্যাহত সহায়তার, বিশেষ করে মহেশখালী-মাতারবাড়ি সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন উদ্যোগ (মিডি) এবং বঙ্গোপসাগর শিল্প বৃদ্ধি বলয় (বিগ-বি) উদ্যোগের অধীনে গৃহীত প্রকল্পগুলোর জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী ইশিবা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত বিপুল সংখ্যক মানুষকে সাময়িকভাবে আশ্রয় দেওয়া এবং তাদের প্রতি অব্যাহত মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেন। অধ্যাপক ইউনূসও এই সংকট মোকাবিলায় জাপানের মানবিক সহায়তার জন্য তাদের সাধুবাদ জানান। জাপান এই বিষয়ে তাদের টেকসই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে। উভয় পক্ষই একমত পোষণ করে যে, এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে টেকসই, নিরাপদ, স্বেচ্ছায় ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনই এই সংকটের চূড়ান্ত সমাধান। তারা এই সংকট সমাধানে সকল সংশ্লিষ্ট অংশীজনের মধ্যে আন্তরিক সংলাপের গুরুত্বও স্বীকার করেন।
বৈঠক শেষে অধ্যাপক ইউনূস উষ্ণ আতিথেয়তার জন্য জাপান সরকারকে ধন্যবাদ জানান এবং প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবাকে পারস্পরিক সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.