গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোতে ‘হতাশ’ জাতিসংঘ মহাসচিব

গাজায় ‘তাৎক্ষণিক, নিঃশর্ত ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতি’ কার্যকর এবং মানবিক সহায়তার পূর্ণ প্রবেশাধিকারের দাবিতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপিত খসড়া প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দেওয়ায় গভীর হতাশা ব্যক্ত করেছেন সংস্থাটির মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ও বিধ্বস্ত গাজা

বৃহস্পতিবার (৫ জুন) নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গুতেরেস এই হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘অতীতে যুদ্ধবিরতির সময় আমরা গাজায় বিপুল পরিমাণ মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে দেখেছি। আমরা চাই, এটি আবারও ঘটুক, তবে স্থায়ীভাবে।’

জাতিসংঘের পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে মহাসচিব জোর দিয়ে বলেন, ‘গাজাবাসীদের কার্যকরভাবে সহায়তা করা কেবল তখনই সম্ভব, যখন স্থায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে, সকল জিম্মিকে নিঃশর্তভাবে মুক্তি দেওয়া হবে এবং মানবিক সহায়তা প্রবেশে কোনো বাধা থাকবে না।’

বুধবারের খসড়া প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যাত হওয়া প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘যখন যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয় না, জিম্মিদের মুক্তি মেলে না এবং মানবিক সহায়তা এমনভাবে পৌঁছায় যাতে বহু ফিলিস্তিনির জীবন হুমকির মুখে পড়ে, তখন আমরা অবশ্যই হতাশ হই।’

সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে কর্মরত জাতিসংঘ কর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গুতেরেস বলেন, ‘তারা শান্তির জন্য কাজ করেন, সহিংসতার সময়ে জীবন রক্ষাকারী সহায়তা পৌঁছে দেন এবং অধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন।’ তিনি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘আমরা জাতিসংঘ কর্মী, মানবিক সহায়তাকারী, সাংবাদিক, চিকিৎসাকর্মী বা বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা কোনো অবস্থাতেই এবং কোথাও মেনে নেব না।’

ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় আনতে বৈশ্বিক ব্যর্থতা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন গুতেরেস। তিনি মন্তব্য করেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত, আজকের বিশ্বে সর্বত্রই বিচারহীনতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। নিরাপত্তা পরিষদ যখন ভূরাজনৈতিক বিভাজনের কারণে কার্যকরভাবে কাজ করতে ব্যর্থ হয়, তখন দায়মুক্তি চলতেই থাকে, যা আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি বিশ্বাস রাখা সকলের জন্য এক গভীর হতাশার বিষয়।’

ফ্রান্স ও সৌদি আরবের যৌথ সভাপতিত্বে আসন্ন নিউইয়র্ক সম্মেলনে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হবে। এ প্রসঙ্গে গুতেরেস বলেন, ‘গাজা ও পশ্চিম তীরের বর্তমান পরিস্থিতিতে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রাখা অপরিহার্য। যারা এই সমাধান মানতে নারাজ, তাদের আমি জিজ্ঞাসা করতে চাই, এক রাষ্ট্রের সমাধান কি ফিলিস্তিনিদের বিতাড়ন অথবা অধিকারহীনভাবে বসবাস করতে বাধ্য করবে?’ তিনি এমন পরিস্থিতিকে ‘সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য’ বলে অভিহিত করেন।