এয়ার ইন্ডিয়া দুর্ঘটনার পর ভারতের সব বোয়িং ৭৮৭ মডেলের বিমান পরীক্ষার নির্দেশ

এয়ার ইন্ডিয়ার ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় ২৭৪ জনের প্রাণহানির পর ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ দেশের সব বোয়িং ৭৮৭ মডেলের বিমানের জরুরি পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছে। শনিবার (১৪ জুন) এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের বিমানমন্ত্রী রাম মোহন নাইডু এই তথ্য জানান।

একটি ক্রেনের মাধ্যমে ভারতের আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের সময় বিধ্বস্ত হওয়া এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনারের ধ্বংসাবশেষ সরানো হচ্ছে

তিনি বলেন, ভারতের বহরে থাকা ৩৪টি বোয়িং ৭৮৭ বিমানের মধ্যে আটটির পরীক্ষা ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। বাকিগুলোও জরুরি ভিত্তিতে পরীক্ষা করা হবে।

এই পরীক্ষায় সরকারি কর্মকর্তারা সরাসরি জড়িত থাকবেন কি না, সে বিষয়ে কিছু বলেননি বিমানমন্ত্রী।

বৃহস্পতিবার (১২ জুন) ব্রিটেনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়া একটি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার উড়তে শুরু করার কিছুক্ষণের মধ্যেই উচ্চতা হারিয়ে নিচে আছড়ে পড়ে এবং বিস্ফোরণে আগুন ধরে যায়। বিমানটি একটি মেডিকেল কলেজের হোস্টেল ভবনে বিধ্বস্ত হয়। এটি গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী বিমান দুর্ঘটনা।

এ দুর্ঘটনায় ২৪২ জন যাত্রীর মধ্যে মাত্র একজন বেঁচে যান। ২৭৪ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আহমেদাবাদের বি জে মেডিকেল কলেজের জুনিয়র ডাক্তারদের সংগঠনের সভাপতি ধবল গামেতি।

ভারতের বিমান নিয়ন্ত্রক সংস্থা শুক্রবার (১৩ জুন) এয়ার ইন্ডিয়াকে তার বোয়িং ৭৮৭-৮ এবং ৭৮৭-৯ উড়োজাহাজগুলোর ওপর অতিরিক্ত রক্ষণাবেক্ষণ পরীক্ষা চালাতে বলেছে। এর মধ্যে রয়েছে টেক-অফ প্যারামিটার মূল্যায়ন, ইলেকট্রনিক ইঞ্জিন নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষা এবং জ্বালানি সংক্রান্ত নিরাপত্তা যাচাই।

এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, তারা কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী- এককালীন নিরাপত্তা পরীক্ষা সম্পন্ন করছে, তবে এতে কিছু দীর্ঘপথের ফ্লাইটে বিলম্ব হতে পারে। যদিও বিমানগুলো গ্রাউন্ডেড (আকাশে চলাচল বন্ধ) করা হয়নি, তবে সূত্র জানায়, সরকার তা বিবেচনা করছে।

দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে ভারত সরকার এবং এয়ার ইন্ডিয়া যৌথভাবে তদন্ত করছে। এর মধ্যে ইঞ্জিনের থ্রাস্ট, ফ্ল্যাপের ত্রুটি এবং টেক-অফের সময় ল্যান্ডিং গিয়ার খোলা থাকার বিষয়গুলো বিশেষভাবে দেখা হচ্ছে।

বিমানে থাকা স্বজনদের মরদেহ শনাক্ত করতে আহমেদাবাদের হাসপাতালের বাইরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন আত্মীয়রা। অধিকাংশ মরদেহই এতটাই দগ্ধ হয়েছে যে, তাদের শনাক্ত করতে ডেন্টাল রেকর্ড এবং ডিএনএ পরীক্ষার প্রয়োজন হচ্ছে।

ফরেনসিক দন্ত চিকিৎসক জয়শঙ্কর পিল্লাই জানিয়েছেন, ১৩৫টি মরদেহের দাঁতের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, যেগুলো আগের রেকর্ডের সঙ্গে মিলিয়ে শনাক্ত করা হবে।

একজন চিকিৎসক বলেন, আমরা নিজেরাও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। বন্ধুবান্ধব ও সহকর্মীদের এমন মৃত্যু আমাদের মর্মাহত করেছে।

বিমানমন্ত্রী নাইডু বলেন, তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন মাসের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়া হবে। আমরা সম্ভাব্য সব দিক তদন্ত করে দেখছি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেব।

এই দুর্ঘটনা এয়ার ইন্ডিয়ার জন্য বড় এক আঘাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, বিশেষত ২০২২ সালে টাটা গোষ্ঠীর হাতে মালিকানা যাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটি সুনাম ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে।