কঠিন সিদ্ধান্তের পথে ট্রাম্প, মধ্যপ্রাচ্যে বাড়ছে উত্তেজনার পারদ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় সামরিক হামলার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন। এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে তিনি তার কয়েকজন ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টার ওপর আগের চেয়ে বেশি নির্ভর করছেন বলে জানা গেছে। দুটি প্রতিরক্ষা সূত্র ও এক জ্যেষ্ঠ প্রশাসনিক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এনবিসি নিউজ এই চাঞ্চল্যকর খবর জানিয়েছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প

আরেকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ট্রাম্প এই বিষয়ে প্রশাসনের ভেতরে ও বাইরের মিত্রদের সঙ্গেও আলোচনা করছেন, যাতে তিনি ইরানে সামরিক পদক্ষেপের বিষয়ে বিভিন্ন মতামত যাচাই করতে পারেন। তবে এই পদক্ষেপের সম্ভাবনাটি তার মূল সমর্থকদের মধ্যেই বিভেদ তৈরি করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প বিভিন্ন বিষয়ে অনেকের পরামর্শ নিলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন মুষ্টিমেয় কিছু ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে। এই ঘনিষ্ঠ মহলে রয়েছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ সুসি মাইলস, ডেপুটি চিফ অব স্টাফ স্টিফেন মিলার এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, যিনি বর্তমানে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্বেও আছেন। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফের পরামর্শও তিনি গুরুত্বের সাথে নেন।

ইরানে সরাসরি সংঘাতে জড়ানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ট্রাম্প তার এই ঘনিষ্ঠ বৃত্তকে আরও ছোট করে এনেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সামরিক পদক্ষেপের বিরোধী হিসেবে পরিচিত ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ডকে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। একইভাবে, প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হিগসেথকেও ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া থেকে অনেকটাই দূরে রাখা হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

তবে পেন্টাগনের মুখপাত্র শন পার্নেল এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘এই দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা। প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রতিদিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলছেন এবং এই সপ্তাহেও তিনি সিচুয়েশন রুমে উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রী হিগসেথ বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং প্রেসিডেন্টের 'শক্তির মাধ্যমে শান্তি' নীতিকে সমর্থন করে চলেছেন।’

প্রতিরক্ষা সূত্র এবং সাবেক এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানান, ট্রাম্প জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল ড্যান কেইন, মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান জেনারেল এরিক কুরিলা এবং সিআইএ পরিচালক জন র‍্যাটক্লিফের কথাও মন দিয়ে শুনছেন।

বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট সাংবাদিকদের জানান, চলমান ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে অবগত দুটি সূত্র জানিয়েছে, পররাষ্ট্র ও সামরিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ট্রাম্প তার পূর্বসূরিদের মতো জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের কাঠামোগত নীতি আলোচনার ওপর নির্ভর করেন না। বরং তার সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াটি অনেকটাই অনানুষ্ঠানিক। তিনি প্রায়শই প্রশাসনের সদস্য, বিদেশি নেতা এবং বাইরের বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে কথোপকথনের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেন। সূত্রগুলো আরও যোগ করে, এই অনানুষ্ঠানিক পদ্ধতির কারণে তার ধারণাগুলোকে চ্যালেঞ্জ করা বা উদ্বেগ জানানোর সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ে।

এর সাম্প্রতিক উদাহরণ হলো, গত মাসে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠকের পর হঠাৎ করেই সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেন ট্রাম্প। এই সিদ্ধান্তে ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তারা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিলেন, কারণ এ নিয়ে আগে কোনো পরিকল্পনা বা বিদেশি ব্যাংক অথবা সিরীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি।

জানুয়ারিতে ক্ষমতায় ফেরার পর ট্রাম্প ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের (এনএসসি) ভূমিকাও উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দিয়েছেন, যা ঐতিহ্যগতভাবে বিভিন্ন ফেডারেল এজেন্সির সঙ্গে সমন্বয় করে নীতি নির্ধারণ এবং সামরিক পদক্ষেপের পরিণতি মূল্যায়ন করত।