ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত তুরস্কের, ট্রাম্পকে ‘বন্ধু’ বললেন এরদোয়ান

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সদ্য ঘোষিত যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়েছেন। বুধবার তিনি বলেন যে, তার দেশ এই যুদ্ধবিরতিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে এবং আশা করে যে উভয় পক্ষই তার ‘বন্ধু’ (মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড) ট্রাম্পের আহ্বানে নিঃশর্তভাবে সাড়া দেবে।

রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান

হেগে ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলন শেষে এক বক্তব্যে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান নিশ্চিত করেন যে, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সাম্প্রতিক সামরিক উত্তেজনা শুরু হওয়ার প্রথম থেকেই তুরস্ক নিবিড় কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছিল। তিনি বলেন, এই সংঘাত ‘অঞ্চলের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করেছিল।’

এরদোয়ান বলেন, ‘অঞ্চলের অন্য সব দেশের মতোই ইসরায়েলের নিরাপত্তাও তার প্রতিবেশীদের স্থিতিশীলতা, শান্তি এবং সমৃদ্ধির ওপর নির্ভরশীল।’ তিনি আরও যোগ করেন, “ইসরায়েলের আক্রমণে গাজার মানবিক সংকট এমন এক মহাবিপর্যয়ে পরিণত হয়েছে, যা কোনো বিবেকবান মানুষ উপেক্ষা করতে পারে না।”

আঙ্কারার দীর্ঘদিনের বিশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, “ইরানের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী সমাধান কেবল কূটনীতি ও আলোচনার মাধ্যমেই সম্ভব।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, “যুদ্ধ ও ধ্বংসযজ্ঞ যে কোনো ফল বয়ে আনে না, আমাদের অঞ্চলে তার অনেক উদাহরণ রয়েছে।”

এরদোয়ান আশা প্রকাশ করেন যে এই যুদ্ধবিরতি একটি স্থায়ী শান্তিতে রূপান্তরিত হবে। তিনি বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি অর্জনের জন্য প্রত্যেককে নিজ নিজ দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হবে।”

ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা শিল্পের একীভূতকরণের বিষয়ে তুর্কি প্রেসিডেন্ট জানান, তিনি সম্মেলনে জোর দিয়েছেন যে ন্যাটোর ইউরোপীয় ইউনিয়ন-বহির্ভূত অংশীদারদের অংশগ্রহণ “পুরো ইউরোপের স্বার্থ রক্ষা করবে।”

তিনি আরও জানান, ইউরোফাইটার জেট কর্মসূচি নিয়ে লন্ডন এবং বার্লিনের সঙ্গে আঙ্কারার আলোচনা চলমান রয়েছে এবং এতে ‘ইতিবাচক অগ্রগতি’ হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সাম্প্রতিক অগ্রগতিকেও তিনি স্বাগত জানান। এরদোয়ান বলেন, ‘আমরা এফ-৩৫ (যুদ্ধবিমান) নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা এফ-৩৫ এর জন্য ১.৩ থেকে ১.৪ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছি এবং আমরা দেখেছি যে জনাব ট্রাম্প এগুলো হস্তান্তরের বিষয়ে সদিচ্ছা পোষণ করেছেন।’

ন্যাটোর যৌথ অবস্থান নিয়ে এরদোয়ান ঘোষণা করেন যে, ‘ন্যাটোর দলিলে যেন সব ধরনের ব্যতিক্রম ছাড়া মিত্রদের মধ্যে প্রতিরক্ষা বাণিজ্য সংক্রান্ত সমস্ত বাধা দূর করার আহ্বান জানানো হয়, তা নিশ্চিত করতে তুরস্ক অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এটাও নিশ্চিত করেছি যে ঘোষণাপত্রে আমাদের এই দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়েছে যে, সন্ত্রাসবাদ দমনে সাফল্য কেবল মিত্রদের মধ্যে প্রকৃত সংহতির মাধ্যমেই সম্ভব।’

সবশেষে, তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে একটি ন্যায্য এবং টেকসই শান্তির জন্য তুরস্কের অবিচল কূটনৈতিক প্রচেষ্টার কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, একটি যুদ্ধবিরতি এবং স্থায়ী শান্তির জন্য সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।’