ট্রাম্পের ভর্তুকি-হুঁশিয়ারি, পাল্টা জবাব মাস্কের

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং প্রযুক্তি খাতের ধনকুবের ইলন মাস্কের মধ্যকার সম্পর্ক এখন তিক্ততায় পূর্ণ। সরকারি একটি ব্যয় বিল নিয়ে ইলন মাস্কের তীব্র সমালোচনার পর এবার তার প্রতিষ্ঠানের পাওয়া সরকারি ভর্তুকি খতিয়ে দেখার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। মঙ্গলবার (১ জুলাই) তিনি ইঙ্গিত দেন যে, মাস্কের প্রতিষ্ঠানগুলো যে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি পেয়েছে, তা তদন্তের জন্য তিনি তার দক্ষতা বিভাগকে নির্দেশ দিতে পারেন। এর মাধ্যমে ফেডারেল সরকারের ‘বিপুল’ অর্থ সাশ্রয় হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইলন মাস্ক

ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ দেওয়া এক পোস্টে বলেন, “ইলন মাস্ক সম্ভবত ইতিহাসে অন্য যেকোনো মানুষের চেয়ে অনেক বেশি ভর্তুকি পেয়েছেন। ভর্তুকি ছাড়া তাকে সম্ভবত তার ব্যবসা গুটিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় ফিরে যেতে হতো। সেক্ষেত্রে আর কোনো রকেট উৎক্ষেপণ, কৃত্রিম উপগ্রহ বা বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদন হতো না এবং আমাদের দেশ বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় করতে পারত। আমার মনে হয়, আমাদের দক্ষতা বিভাগের (ডোজি) বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা উচিত। এর মাধ্যমে বিশাল অঙ্কের অর্থ বাঁচানো সম্ভব!!!”

মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন মন্তব্যের পর বসে থাকেননি ইলন মাস্কও। তিনি তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘এক্স’-এ পাল্টা জবাবে লেখেন, “আমি আক্ষরিক অর্থেই বলছি, সবকিছু ছেঁটে ফেলুন। এখনই।”

এই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয় সরকারের একটি নতুন ব্যয় বিলকে কেন্দ্র করে। বেশ কিছুদিন নীরব থাকার পর শনিবার সিনেটে বিলটি উত্থাপিত হলে মাস্ক এটিকে ‘সম্পূর্ণ উন্মাদনা ও ধ্বংসাত্মক’ বলে অভিহিত করেন। সোমবার তিনি তার সমালোচনা আরও তীব্র করে বলেন, “যেসব আইনপ্রণেতা ব্যয় কমানোর কথা বলে প্রচার চালিয়ে এখন এই বিলকে সমর্থন করছেন, তাদের লজ্জায় মাথা নত করা উচিত!”

তিনি আরও যোগ করেন, “এবং আমি যদি এই পৃথিবীতে শেষ কাজটিও করি, তবে তা হবে আগামী বছর তাদের প্রাথমিক নির্বাচনে পরাজয় নিশ্চিত করা।”

টেসলা ও স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনেরও আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বিলটির বিশাল ব্যয়ের দিকে ইঙ্গিত করে মনে হচ্ছে, “আমরা একটি একদলীয় দেশে বাস করি – ‘অতিভোজী শূকরদের দল’!!” তিনি লেখেন, “এখন সময় এসেছে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের, যারা সত্যিই জনগণের কথা ভাববে।”

উল্লেখ্য, একসময় ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইলন মাস্কের সুসম্পর্ক ছিল। মাস্ক ট্রাম্পের পুনঃনির্বাচনী প্রচারণায় প্রায় ৩০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করেছেন এবং ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে সরকারি ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে গঠিত বিতর্কিত ‘সরকারি দক্ষতা বিভাগ’ (ডোজি)-এর নেতৃত্বও দিয়েছেন। বিশ্বের শীর্ষ ধনী এই ব্যক্তির যুক্তি, নতুন আইনটি দেশের জাতীয় ঋণ ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে দেবে এবং ‘ডোজি’-র মাধ্যমে তিনি যে অর্থ সাশ্রয় করেছেন, তা পুরোপুরি মুছে ফেলবে।

তবে কংগ্রেসে মাস্কের প্রভাব কতটা বা তার মতামত বিল পাসের ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা রাখবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে রিপাবলিকানরা আশঙ্কা করছেন, ট্রাম্পের সঙ্গে মাস্কের এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী কংগ্রেস নির্বাচনে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখার চেষ্টায় আঘাত হানতে পারে।

এই দ্বন্দ্বের প্রভাব প্রযুক্তি বাজারেও পড়েছে। টেসলার শেয়ারের দরে ব্যাপক ওঠানামা দেখা গেছে, যার ফলে প্রতিষ্ঠানটির বাজারমূল্য প্রায় ১৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলার কমে গিয়েছিল, যদিও পরে তা পুনরুদ্ধার হয়েছে।