‘ইউরোপকে নিজের ভাগ্য নিজের হাতে নিতে হবে’: ফ্রান্স ও জার্মানির ঐকমত্য

ইউরোপকে আরও শক্তিশালী ও সার্বভৌম করার লক্ষ্যে ফ্রান্স ও জার্মানি তাদের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। শুক্রবার প্যারিসে আয়োজিত এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জঁ-নোয়েল বারো এবং তার জার্মান প্রতিপক্ষ জোহান ওয়াডেফুল ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখা এবং রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একযোগে কাজ করার ঘোষণা দেন।

ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জঁ-নোয়েল বারো বলেন, ‘ফ্রান্স-জার্মানি সম্পর্কের যে চালিকাশক্তি, তার প্রতি আমাদের দুজনেরই একই রকম অঙ্গীকার রয়েছে। এটি একটি অনন্য অংশীদারিত্ব, যা একটি একতাবদ্ধ, শক্তিশালী, আরও সার্বভৌম এবং আরও স্থিতিশীল ইউরোপ গড়ার প্রচেষ্টায় আমাদের সামনের সারিতে রাখে। আমরা এমন একটি ইউরোপীয় ইউনিয়নে বিশ্বাস করি যা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সক্ষম, তার নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষা করতে এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে সুস্পষ্টভাবে কথা বলতে পারে।’

তিনি জানান, দুই দেশের সম্পর্ককে পুনরুজ্জীবিত করতে এবং ইউরোপকে শক্তিশালী করতে তারা একটি বিস্তারিত কর্মসূচিতে একমত হয়েছেন। এর মূল লক্ষ্য হলো নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা, ইউরোপীয় প্রতিযোগিতার সক্ষমতা পুনরুদ্ধার ও উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থার মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করা। বারো পুনরায় নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমরা আমাদের নিজস্ব প্রতিরক্ষা সক্ষমতা জোরদার করতে এবং আমাদের ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা শিল্প ও প্রযুক্তিগত ভিত্তিকে সমর্থন জুগিয়ে যাব।’

জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। তিনি ইউরোপকে নিজের ভাগ্য নিজের হাতে তুলে নেওয়ার এবং মহাদেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

ইউক্রেন সমর্থন ও রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা

সংবাদ সম্মেলনে ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে দুই নেতাই তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেন। বারো বলেন, ‘রাশিয়ার অসহনীয় আগ্রাসনের মুখে ইউক্রেনকে দীর্ঘমেয়াদে এবং সব ক্ষেত্রে দৃঢ় সমর্থন অব্যাহত রাখার অপরিহার্যতা আমরা দুজনই স্বীকার করি। এই সমর্থনের মধ্যে বিশেষভাবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ইউক্রেনকে আত্মরক্ষার জন্য অস্ত্রের জোগান অব্যাহত রাখা এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা কঠোর করা, যাতে তাদের আগ্রাসনে অর্থায়নের উৎস শুকিয়ে যায়।’

রাশিয়ার ওপর ইউরোপের ‘ অন্যতম কঠোর’ নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজ অনুমোদিত হওয়ায় তারা সন্তোষ প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে জোহান ওয়াডেফুল যুক্তরাষ্ট্রকেও একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

মধ্যপ্রাচ্য, সিরিয়া ও অভিবাসন প্রসঙ্গ

মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংকট নিয়ে বারো বলেন, ‘অবশ্যই একটি যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সকল পণবন্দিকে মুক্তি দিতে হবে এবং সংঘাতের একটি স্থায়ী সমাধানে পৌঁছানোর জন্য আলোচনা শুরু করতে হবে।’ তিনি গাজা উপত্যকার মানবিক পরিস্থিতির জরুরি উন্নতির জন্য ইসরায়েল তার প্রতিশ্রুতি কতটা বাস্তবায়ন করছে তা পর্যবেক্ষণের ওপর জোর দেন।

সিরিয়া প্রসঙ্গে জোহান ওয়াডেফুল বলেন, যদি সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে এবং বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা দেয়, তবে তারা সেই সরকারকে সমর্থন করবে।

অভিবাসন বিষয়ে ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, জার্মানির সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ জোরদার করার অধিকার থাকলেও শেনজেন অঞ্চলের মধ্যে অবাধ চলাচল, বিশেষ করে সীমান্ত অঞ্চলের নাগরিকদের জন্য, যেন বাধাগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।

সবশেষে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত ৩০ শতাংশ শুল্কের বিষয়ে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি ‘আলোচনাভিত্তিক সমাধানের’ পক্ষে বলে উল্লেখ করেন।