‘নিঃশর্ত’ যুদ্ধবিরতি চায় কম্বোডিয়া, ক্লাস্টার বোমা ব্যবহারের অভিযোগ

থাইল্যান্ডের সঙ্গে দুই দিনের রক্তক্ষয়ী সীমান্ত সংঘর্ষের পর তাৎক্ষণিক ও ‘নিঃশর্ত’ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে কম্বোডিয়া। জাতিসংঘে নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত ছিয়া কেও এই আহ্বান জানান। তবে নমপেনের এই প্রস্তাবে এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে কোনো সাড়া দেয়নি থাইল্যান্ড।

রাষ্ট্রদূত ছিয়া কেও বলেন, নমপেন এই বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়। একইসঙ্গে তিনি সংঘাতে থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ ক্লাস্টার বোমা ব্যবহারের গুরুতর অভিযোগ তোলেন।

এর আগে কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী আটটি জেলায় সামরিক আইন জারি করা হয়। কয়েক দিনের এই সংঘাতে উভয় দেশের অন্তত ৩২ জন নিহত এবং কয়েক হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। দুই দেশই বৃহস্পতিবার প্রথম গুলি ছোড়ার জন্য পরস্পরকে দায়ী করেছে।

থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই শুক্রবার সতর্ক করে বলেছেন, এই সংঘাত যুদ্ধের দিকে মোড় নিতে পারে। তিনি জানান, সংঘাতে এখন ভারী অস্ত্র ব্যবহৃত হচ্ছে এবং তা সীমান্তের অন্তত ১২টি স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে।

থাইল্যান্ডের অভিযোগ, কম্বোডিয়া বেসামরিক এলাকায় গুলি চালাচ্ছে। এ কারণে রকেটের আওতায় থাকা সব গ্রাম খালি করে ফেলা হয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী রয়টার্সকে জানিয়েছেন, এই সংঘাতে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার কোনো প্রয়োজন নেই।

অন্যদিকে, কম্বোডিয়া থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে ক্লাস্টার বোমা ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছে। আন্তর্জাতিক আইনে বেসামরিক জনগণের ওপর নির্বিচারে প্রভাব ফেলে বলে বিশ্বের অধিকাংশ দেশে এই বোমা নিষিদ্ধ। তবে থাইল্যান্ড এই অভিযোগের বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক জবাব দেয়নি।

এদিকে, দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ানের বর্তমান সভাপতি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম দুই দেশকে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রও অবিলম্বে শত্রুতা বন্ধ করে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে সংঘাত নিরসনের আহ্বান জানিয়েছে।

কম্বোডিয়ার জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মালি সোচেতা শনিবার সাংবাদিকদের জানান, নতুন সংঘাতে তাদের পক্ষে আরও সাতজন বেসামরিক নাগরিক এবং পাঁচজন সৈন্য নিহত হয়েছেন। এর আগে বৃহস্পতিবার থাইল্যান্ডের রকেট হামলায় আরও একজন কম্বোডীয় নাগরিকের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছিল। মুখপাত্র আরও জানান, হামলায় কমপক্ষে ৫০ জন কম্বোডীয় বেসামরিক নাগরিক এবং ২০ জনেরও বেশি সৈন্য আহত হয়েছেন।

অন্যদিকে, থাইল্যান্ড গত দুই দিনের লড়াইয়ে শিশুসহ ১৩ জন বেসামরিক নাগরিক ও ছয়জন সৈন্য নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছে। কম্বোডিয়ার হামলায় দেশটির ২৯ জন সেনা ও ৩০ জন বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছেন বলেও থাই কর্তৃপক্ষ উল্লেখ করেছে।

থাইল্যান্ডের দাবি, কম্বোডীয় সেনাবাহিনী সীমান্তের কাছে থাই সেনাদের ওপর নজরদারির জন্য ড্রোন মোতায়েন করলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। অপরদিকে কম্বোডিয়া বলেছে, থাই সেনারা সীমান্তের কাছে একটি খেমার-হিন্দু মন্দিরে হামলা চালালে এই সংঘাত শুরু হয়।

দুই দেশের মধ্যে এই সীমান্ত বিরোধ শতবর্ষের পুরোনো। ফরাসি ঔপনিবেশিক আমলে কম্বোডিয়ার সীমানা নির্ধারণ নিয়ে এর সূচনা হয়েছিল। গত মে মাসে সংঘর্ষে একজন কম্বোডীয় সৈন্য নিহত হওয়ার পর নতুন করে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়।

সূত্র: বিবিসি