ফিলিস্তিনি কিশোরের মরদেহ আটকে রাখার অনুমতি ইসরায়েলি আদালতের

হামাসের সঙ্গে ভবিষ্যৎ বন্দি বিনিময়ে আলোচনার টেবিলে চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে এক ফিলিস্তিনি কিশোরের লাশ আটকে রাখার অনুমতি দিয়েছে ইসরায়েলের সর্বোচ্চ আদালত। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত ১৪ বছর বয়সী ওয়াদিয়া শাদি সা’দ এলিয়ানের মরদেহ নিয়ে এ রায় দেওয়া হলো। সংবাদমাধ্যম টিআরটি গ্লোবালের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ইসরায়েলে আরব সংখ্যালঘুদের আইনি সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা ‘আদালাহ’ জানিয়েছে, গত ৩১ জুলাই দেশটির সর্বোচ্চ আদালত এই রায় দেন। রায়ে বলা হয়, পূর্ব জেরুজালেমের বাসিন্দা ওয়াদিয়ার মরদেহ দেড় বছর পরেও ইসরায়েলের হেফাজতে রাখার সিদ্ধান্তটি বৈধ।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের দাবি, পশ্চিম তীরে অবস্থিত অবৈধ ইসরায়েলি বসতি মাআলে আদুমিমের কাছে ওয়াদিয়া একজন পুলিশ সদস্যকে ছুরিকাঘাতের চেষ্টা করলে তাকে গুলি করা হয়। তবে তার পরিবারের পক্ষ থেকে জমা দেওয়া ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, পালানোর সময় ওয়াদিয়াকে পেছন থেকে গুলি করা হয়। পরে সে রাস্তায় নিষ্প্রাণ অবস্থায় পড়ে থাকার সময় তাকে আবারও গুলি করা হয়।

২০২৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি নিহত হওয়ার পর থেকে ওয়াদিয়ার মরদেহ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। আদালত কিছু গোপন প্রমাণের ভিত্তিতে রায় দিয়ে বলেছেন, সামরিক কমান্ডারের এ মরদেহ আটকে রাখা এবং সাময়িকভাবে দাফন করার অধিকার রয়েছে।

চলতি বছরের জুলাই মাসে আদালাহ ওয়াদিয়ার পরিবারের পক্ষে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের এই নীতির বিরুদ্ধে আবেদন করেছিল। সংস্থাটির যুক্তি ছিল, দীর্ঘ সময় ধরে মরদেহ আটকে রাখা ইসরায়েলি ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। এটি মৃত ব্যক্তি এবং তার পরিবারের অধিকার ও মর্যাদারও পরিপন্থী।

আদালাহর আইনজীবী নারেমান শেহাদেহ-জোয়াবি গত ৩ জুলাই আদালতকে বলেন, ‘ওয়াদিয়ার লাশ দেড় বছর ধরে আটকে রাখা তার পরিবারের অধিকার ও শিশুটির মৃত্যুর পর প্রাপ্য মর্যাদার চরম লঙ্ঘন। এ ছাড়া ব্রিটিশ শাসনামলের ১৯৪৫ সালের জরুরি বিধিমালার কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্র যেভাবে এই ব্যবস্থার ন্যায্যতা দিচ্ছে, তা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।’

আদালতের এই রায়ের তীব্র নিন্দা জানিয়ে আদালাহ বলেছে, ‘এই রায় আন্তর্জাতিক আইন ও মৌলিক মানবতার চরম লঙ্ঘনকে বৈধতা দিচ্ছে এবং ফিলিস্তিনিদের মানুষ হিসেবে গণ্য না করার প্রবণতাকে প্রতিষ্ঠিত করছে।’

মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, ইসরায়েলের এ ধরনের নীতি নতুন নয়। ‘ডিফেন্স ফর চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনাল-প্যালেস্টাইন’ জানিয়েছে, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইসরায়েল ৪৫ জনের বেশি ফিলিস্তিনি শিশুর মরদেহ আটকে রেখেছে। অন্যদিকে ‘জেরুজালেম লিগ্যাল এইড অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস সেন্টার’-এর তথ্যমতে, ২০২৫ সালের মে মাস পর্যন্ত মোট ৬৬৮ জন ফিলিস্তিনির লাশ ইসরায়েলের হেফাজতে রয়েছে।