‘অন্তর্বর্তী’ পদবি আর নয়, আফগানিস্তানে স্থায়ী সরকার গঠনের ইঙ্গিত?

আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখলের চতুর্থ বর্ষপূর্তিতে নিজেদের শাসন ব্যবস্থাকে স্থায়ী রূপ দেওয়ার পথে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটির সরকার। শুক্রবার (১৫ আগস্ট) সংগঠনটির সর্বোচ্চ নেতা মোল্লা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা এক নির্দেশে মন্ত্রিসভাসহ সরকারের সব সদস্যকে তাদের পদবির সঙ্গে ‘অন্তর্বর্তী’ শব্দটি ব্যবহার বন্ধ করতে বলেছেন। বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে তালেবান একটি স্থায়ী সরকার প্রতিষ্ঠার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দিলো।

২০২১ সালের আগস্ট মাসে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর তালেবান তাদের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের নিয়ে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেছিল, যেখানে কোনো নারী প্রতিনিধিত্ব ছিল না। সে সময় তালেবানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এটি একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা এবং ভবিষ্যতে সব পক্ষকে নিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্থায়ী সরকার গঠন করা হবে।

ক্ষমতা দখলের তিন বছর পর, বর্ষপূর্তির দিনে আখুন্দজাদা তার কর্মকর্তাদের পদবি থেকে ‘অন্তর্বর্তী’ শব্দটি বাদ দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, ‘ইসলামি আমিরাতের সব মন্ত্রী এবং মন্ত্রিসভার সদস্যদের আর ‘অন্তর্বর্তী’ পদবি ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই।’ তবে তার এই ঘোষণায় একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠন বা নারীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার বিষয়ে কোনো উল্লেখ ছিল না।

কাবুলের ‘কৌশলগত ও আঞ্চলিক অধ্যয়ন কেন্দ্র’-এর পরিচালনা পর্ষদের সদস্য আব্দুল সাবুর মুবারিজ এ বিষয়ে বলেন, ‘সর্বোচ্চ নেতার এই নির্দেশ তালেবান সরকারের জন্য আইনের মতো, যা কার্যত সংবিধানের স্থান নেবে। এই সিদ্ধান্তের রাজনৈতিক অর্থ হলো—বর্তমান সরকার কাঠামোতে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তনের আশা আর নেই।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষণার পেছনে তালেবানের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের একটি প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু রাশিয়া ছাড়া অন্য কোনো দেশ তাদের স্বীকৃতি না দেওয়ায় সেই প্রচেষ্টায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। তাই তারা এখন শাসনব্যবস্থাকে স্থায়ী রূপ দেওয়ার দিকেই এগোচ্ছে।’

অন্যদিকে, কাবুলের সালাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক নাসির আহমদ নাওয়িদি মনে করেন, এই সিদ্ধান্তের একটি ভিন্ন দিকও থাকতে পারে। তিনি বলেন, ‘মন্ত্রীদের পদবি থেকে ‘অন্তর্বর্তী’ শব্দ অপসারণের ফলে তালেবান কর্মকর্তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে পারে এবং তারা আরও স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ পাবেন।’

তিনি এটিকে ‘ইতিবাচক’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, প্রতিটি মন্ত্রণালয়েরই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার থাকা প্রয়োজন। তবে এই ঘোষণার মাধ্যমে সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর কাছে একটি স্পষ্ট বার্তাও পৌঁছে দেওয়া হলো যে, সর্বোচ্চ নেতার আদেশই চূড়ান্ত এবং তা বিনা প্রশ্নে পালন করতে হবে।