আলবানিজকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলায় নেতানিয়াহুকে কড়া জবাব দিলো অস্ট্রেলিয়া

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনাকে কেন্দ্র করে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর তীব্র সমালোচনার কড়া জবাব দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজকে ‘দুর্বল ও বিশ্বাসঘাতক’ আখ্যা দেওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। বুধবার অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টনি বার্ক এক সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহুর মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানান।

এবিসি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টনি বার্ক বলেন, ফিলিস্তিনকে সমর্থনকারী দেশগুলোর ওপর নেতানিয়াহু ক্ষোভ ঝাড়ছেন, কিন্তু অস্ট্রেলিয়া কোনো হুমকিতে ভয় পাবে না। তিনি বলেন, ‘কত মানুষকে বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়া যায় বা কত শিশুকে অনাহারে রাখা যায়, তা দিয়ে শক্তি পরিমাপ হয় না।’

বার্ক আরও বলেন, ‘প্রকৃত শক্তি হলো সেটাই, যা প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজ দেখিয়েছেন। যখন তিনি এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেন যা ইসরায়েল পছন্দ করবে না, তখন তিনি সরাসরি বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গেই কথা বলেন।’

এর আগে মঙ্গলবার নেতানিয়াহুর দপ্তর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে এক পোস্টে জানায়, আলবানিজ ‘একজন দুর্বল রাজনীতিবিদ, যিনি ইসরায়েলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন এবং অস্ট্রেলিয়ার ইহুদিদের ত্যাগ করেছেন।’

এদিকে, ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থি সংসদ সদস্য সিমচা রথম্যানের ভিসা বাতিলের সিদ্ধান্তেরও পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন বার্ক। গাজার শিশুদের ‘ইসরায়েলের শত্রু’ বলে মন্তব্য করার জেরে চলতি মাসে রথম্যানের অস্ট্রেলিয়া সফর বাতিল করা হয়। এ বিষয়ে বার্ক বলেন, ‘যদি কেউ ইসরায়েলি শিশুদের সম্পর্কে এমন বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করে জনসভায় বক্তৃতা দিতে আসত, আমি তারও ভিসা বাতিল করতাম। ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক দৃষ্টিভঙ্গির সুরক্ষার জন্য আমি কোনো শিথিল মানদণ্ড রাখব না।’

সোমবার অস্ট্রেলীয় সরকার রথম্যানের ভিসা বাতিল করে এবং তার ওপর তিন বছরের প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর আগেও ২০২৪ সালের নভেম্বরে, দখলকৃত পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি নির্মাণে সমর্থনের কারণে সাবেক ইসরায়েলি মন্ত্রী আয়েলেত শাকেদকে ভিসা দেয়নি অস্ট্রেলিয়া।

অস্ট্রেলিয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের জন্য নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধিদের ভিসা বাতিল করেছে। অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং ইসরায়েলের এই পদক্ষেপকে ‘অযৌক্তিক প্রতিক্রিয়া’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার এই উদ্যোগে অস্ট্রেলিয়ার পাশাপাশি ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, মাল্টা, কানাডা ও পর্তুগালও শামিল হওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। আগামী সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে এ বিষয়ে ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হবে।

এই কূটনৈতিক উত্তেজনার আবহে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলা অব্যাহত রয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ৬২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এছাড়া, গাজায় চালানো অভিযানের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গণহত্যার মামলারও মুখোমুখি হয়েছে।