মার্কিন ভিসানীতিতে নতুন সংযোজন: ‘আমেরিকা-বিরোধী’ হলেই আবেদন বাতিল

যুক্তরাষ্ট্রে কাজের বা অভিবাসনের জন্য ভিসা প্রাপ্তি এখন থেকে আরও জটিল হতে চলেছে। মার্কিন অভিবাসন কর্তৃপক্ষ এমন একটি নতুন নীতি ঘোষণা করেছে, যেখানে আবেদনকারীকে ‘আমেরিকা-বিরোধী’ হিসেবে চিহ্নিত হলে তার আবেদন সরাসরি বাতিল করে দেওয়া হবে। বুধবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এই খবর জানিয়েছে।

এই নীতির আওতায়, অভিবাসন কর্মকর্তারা আবেদনকারীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন। তাদের ‘আমেরিকা-বিরোধী’ বা সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। মার্কিন নাগরিকত্ব ও অভিবাসন সেবা সংস্থার (ইউএসসিআইএস) হালনাগাদ করা এই নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, আবেদনকারীর ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার প্রমাণ মিললেও তার আবেদন বাতিল হতে পারে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের অধীনে অভিবাসন নীতি কঠোর করার এটি একটি নতুন পদক্ষেপ। গত জুনে অভিবাসন আবেদনের ক্ষেত্রে সামাজিক মাধ্যম যাচাইয়ের যে নিয়ম চালু করা হয়েছিল, এটি তারই সম্প্রসারিত রূপ। এরই মধ্যে চলতি বছর ছয় হাজারের বেশি বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে বলে সোমবার একজন মার্কিন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।

তবে নতুন এই নীতিমালায় ‘আমেরিকা-বিরোধী’ মনোভাবের কোনো সুস্পষ্ট সংজ্ঞা দেওয়া হয়নি, যা অভিবাসন আইনজীবী ও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি করেছে। নীতিমালায় শুধু বলা হয়েছে, যারা ইহুদিবিদ্বেষী সন্ত্রাস বা এ ধরনের সংগঠনের সঙ্গে জড়িত, তারা ‘আমেরিকা-বিরোধী’ বলে গণ্য হবেন। এর ব্যাখ্যার জন্য ১৯৫২ সালের অভিবাসন ও জাতীয়তা আইনের (আইএনএ) কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ওই আইন অনুযায়ী, সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের সদস্য, বিশ্বজুড়ে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সমর্থক এবং সহিংস পন্থায় মার্কিন সরকারকে উৎখাতের চেষ্টাকারীরা ‘আমেরিকা-বিরোধী’ হিসেবে বিবেচিত।

এই ‘অস্পষ্ট’ নীতির কারণে কর্মকর্তারা নিজেদের ইচ্ছামতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। ব্রিগহ্যাম ইয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক লিলি লোপেজ সংবাদ সংস্থা এপিকে বলেন, ‘আমার কাছে বড় খবর এটাই, যে তারা সূক্ষ্ম পক্ষপাত ও একপাক্ষিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার দরজা খুলে দিচ্ছে।’ হিউস্টন-ভিত্তিক অভিবাসন আইনজীবী স্টিভেন ব্রাউন বলেন, ‘তথাকথিত মার্কিন মূল্যবোধের সংজ্ঞা যে যার সুবিধামতো দেয়। অভিবাসন আইনে এর কোনো উল্লেখ নেই।’ অনেকে এই উদ্যোগকে ১৯৫০-এর দশকের ‘ম্যাককার্থিইজম’-এর সঙ্গে তুলনা করছেন, যখন যুক্তরাষ্ট্রে সমাজতন্ত্রের ভীতি ছড়িয়ে পড়ায় বহু বামপন্থিকে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল।

এই ঘোষণার পর অনলাইন ফোরামগুলোতে ব্যাপক বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়েছে। সামাজিক মাধ্যম রেডিটে একজন ব্যবহারকারী প্রশ্ন তোলেন, ‘ইরানের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক হামলার বিপক্ষে কথা বলা, কিংবা গাজায় যুদ্ধবিরতির পক্ষে সুর তোলাও কি আমেরিকা-বিরোধী মনোভাবের পরিচায়ক?’ মার্কিন অভিবাসন কাউন্সিলের জ্যেষ্ঠ ফেলো অ্যারন রেইখলিন-মেলনিক এক্স পোস্টে লিখেছেন, ‘এই শব্দাংশটি (আমেরিকা-বিরোধী) এর আগে কখনো অভিবাসন আইনে যুক্ত করা হয়নি এবং এর সংজ্ঞা পুরোপুরি ট্রাম্প প্রশাসনের মস্তিষ্কপ্রসূত।’