ইসরায়েলি সেনাবাহিনী: গাজা সিটিতে অভিযানের ‘নতুন পর্যায়’ শুরু হয়েছে

গাজা সিটি পুনরায় দখলের লক্ষ্যে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তাদের চলমান অভিযানের ‘নতুন পর্যায়’ শুরু করেছে বলে বুধবার জানিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনি এই ছিটমহলে ইসরায়েলের বিধ্বংসী সামরিক তৎপরতা আরও তীব্রতর হলো।

এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ইফফি ডেফ্রিন বলেন, ‘আমরা গাজা সিটিতে প্রাথমিক অভিযান ও হামলার প্রথম পর্যায় শুরু করেছি। আমাদের সেনারা এখন গাজা সিটির উপকণ্ঠে অবস্থান করছে।’ তিনি জোর দিয়ে জানান, সেনাবাহিনী তাদের স্থল অভিযানের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু করেছে, যার সাংকেতিক নাম ‘অপারেশন গিডিয়নস চ্যারিয়টস’। ডেফ্রিন আরও বলেন, ‘অভিযানের আগের হামাস এবং আজকের হামাস এক নয়।’

ডেফ্রিনের তথ্য অনুযায়ী, সেনাপ্রধান আইয়াল জামির অভিযানের পরিধি বাড়াতে নতুন করে ৬০ হাজার রিজার্ভ সেনাকে তলব করার নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া, বর্তমানে কর্মরত আরও ২০ হাজার রিজার্ভ সেনার মেয়াদ বাড়ানোরও অনুমোদন দিয়েছেন তিনি। মুখপাত্র জানান, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা উপত্যকার ৭৫ শতাংশের ‘অভিযানিক নিয়ন্ত্রণ’ প্রতিষ্ঠা করেছে।

এর আগে গত ৮ আগস্ট ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর একটি পরিকল্পনা অনুমোদন করে, যেখানে গাজা উপত্যকা ধীরে ধীরে পুনরায় দখলের কথা বলা হয়েছে এবং এর শুরু হবে গাজা সিটি থেকে। এই পরিকল্পনার আওতায় প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে দক্ষিণাঞ্চলে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা, গাজা শহর ঘিরে ফেলা এবং আবাসিক এলাকায় ব্যাপক স্থল অভিযান চালানোর কথা উল্লেখ রয়েছে।

এই পরিকল্পনার প্রথম ধাপ হিসেবে গত ১১ আগস্ট ইসরায়েলি বাহিনী গাজা সিটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় জেইতুন এলাকায় ব্যাপক হামলা চালায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, এই অভিযানে বিস্ফোরক-ভর্তি রোবট দিয়ে বাড়িঘর ধ্বংস করা হয় এবং নির্বিচারে কামান হামলা ও গোলাবর্ষণ চালানো হয়, যা ব্যাপক বাস্তুচ্যুতির ঘটনা ঘটায়।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ৬২,১০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এই সামরিক অভিযানে সমগ্র ছিটমহলটি প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং সেখানে চরম দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এছাড়া, গাজায় চালানো অভিযানের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গণহত্যার মামলারও মুখোমুখি হয়েছে ইসরায়েল।