জাতিসংঘ: ইসরায়েলের বিতর্কিত বসতি পরিকল্পনা ‘মানবিক বিপর্যয়’ ডেকে আনবে

অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের তথাকথিত ‘ই-১’ পরিকল্পনার আওতায় তিন হাজারেরও বেশি বসতি স্থাপনের অনুমোদন ফিলিস্তিনিদের জন্য ‘বিপর্যয়কর মানবিক পরিণতি’ বয়ে আনবে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। বুধবার জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয়কারী দপ্তর (ওচা) এক বিবৃতিতে এই উদ্বেগ প্রকাশ করে।

বিবৃতিতে বলা হয়, এই প্রকল্প কার্যকরভাবে পশ্চিম তীরের উত্তরাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলকে দক্ষিণাঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে। এর ফলে ফিলিস্তিনিদের চলাচল এবং বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে। ওচা সতর্ক করে বলেছে, ‘এই পরিকল্পনার একটি বিপর্যয়কর মানবিক প্রভাব পড়বে, যা শুধু ওই এলাকার ফিলিস্তিনিদের ওপরই নয়, বরং বৃহত্তর অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডজুড়ে অনুভূত হবে।’

সংস্থাটি আরও জানায়, এই পরিকল্পনা বিশেষভাবে ১৮টি ফিলিস্তিনি বেদুইন সম্প্রদায়কে বাস্তুচ্যুত হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে ফেলবে।

ইসরায়েলের এই বসতি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় একটি সংযোগ সড়কও নির্মাণ করা হবে, যা মূল জেরুজালেম-জেরিকো সড়ক থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে দেবে। ওচা জোর দিয়ে বলেছে, ‘এই ধরনের সড়ক ভৌগোলিক অখণ্ডতা নষ্ট করে, ভ্রমণের সময় বাড়ায় এবং মানুষের জীবন-জীবিকা ও পরিষেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে’।

জাতিসংঘ আরও সতর্ক করে বলেছে, ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা রয়েছে ই-১ এলাকাকে বিচ্ছেদ দেয়ালের অতিরিক্ত অংশ দিয়ে ঘিরে ফেলার। এটি চলাচল ও যাতায়াতের ওপর বিধিনিষেধ আরও গভীর করবে এবং আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের ২০০৪ সালের পরামর্শমূলক মতামতের পরিপন্থী। ওই মতামতে বলা হয়েছিল, অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে নির্মিত দেয়ালের সমস্ত অংশ অবশ্যই ভেঙে ফেলতে হবে।

গত সপ্তাহে ইসরায়েলি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ জেরুজালেমের পূর্বে মা’লে আদুমিম এলাকায় ৩,৪০১টি এবং পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে আরও ৩,৫১৫টি বসতি স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছেন। এই প্রকল্পের লক্ষ্য হলো পশ্চিম তীরকে দুটি ভাগে বিভক্ত করা, এর উত্তর ও দক্ষিণের শহরগুলোর মধ্যে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা এবং পূর্ব জেরুজালেমকে পুরোপুরি আলাদা করে ফেলা।

ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এটি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ পরিকল্পনার অংশ। তারা সতর্ক করেছে, এই পদক্ষেপ দখলদারিকে আরও পাকাপোক্ত করবে এবং একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনাকে পুরোপুরি নির্মূল করবে।

জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ইসরায়েলি বসতিগুলোকে অবৈধ বলে মনে করে। গত জুলাই মাসে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত এক পরামর্শমূলক মতামতে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলদারিত্বকে অবৈধ ঘোষণা করে এবং পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমের সমস্ত বসতি খালি করার আহ্বান জানায়।