আইসিসি কর্মকর্তাদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ

হেগ-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) চারজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এই পদক্ষেপকে বিচারিক প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতার ওপর ‘নগ্ন হস্তক্ষেপ’ এবং ‘আইনের শাসনের ওপর আক্রমণ’ হিসেবে অভিহিত করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আইসিসি ও জাতিসংঘ। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ইসরায়েল।

বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর আইসিসির দুজন বিচারক ও দুজন প্রসিকিউটরসহ মোট চারজন কর্মকর্তার ওপর এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে। নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রয়েছেন কানাডার বিচারক কিম্বার্লি প্রোস্ট, ফ্রান্সের নিকোলাস গিলো, ফিজির প্রসিকিউটর নাজাত শামীম খান এবং সেনেগালের মামে মান্দিয়ায়ে নিয়াং।

এক বিবৃতিতে আইসিসি বলেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন আইসিসির অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা জোরদার করছে। এ ধরনের কার্যক্রম একটি নিরপেক্ষ বিচারিক প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপের শামিল। এই নিষেধাজ্ঞাকে বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ নিরীহ ভুক্তভোগীর বিরুদ্ধে অবমাননা বলেও উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অন্যায় ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। মার্কিন প্রশাসনের দাবি, কোনো দেশের সম্মতি ছাড়াই তারা যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েলের নাগরিকদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির মতো কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে মার্কিন এখতিয়ারের মধ্যে থাকা অভিযুক্তদের সমস্ত সম্পদ জব্দ করা হবে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এক পৃথক বিবৃতিতে জানায়, আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে আইসিসির তদন্তের রায় অনুমোদন করেছিলেন বিচারক কিম্বার্লি প্রোস্ট, যদিও পরে সেই রায় বাতিল করা হয়। এছাড়া, গাজায় যুদ্ধের ঘটনায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির অনুমোদন দিয়েছিলেন বিচারক নিকোলাস গিলো।

মার্কিন এই পদক্ষেপে হতাশা প্রকাশ করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা স্বাধীন বিচার বিভাগের নীতির পরিপন্থী।’

জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেছেন, ‘আইসিসির প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আদালতকে লক্ষ্যবস্তু করায় জাতিসংঘ খুবই উদ্বিগ্ন।’

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ফেডারেশনের প্রতিনিধি দানিয়া চাইকেল বলেন, ‘মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আইনের শাসনের ওপর একটি অব্যাহত আক্রমণ এবং নৃশংস অপরাধের বিচার দাবিকারীদের ভয় দেখানোর স্পষ্ট প্রচেষ্টা।’

উল্লেখ্য, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমবার ক্ষমতায় থাকাকালেও আইসিসির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন, যা পরে জো বাইডেন প্রশাসন তুলে নেয়।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান