যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উপেক্ষা করে গাজা দখলের পথে ইসরায়েল

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজা শহর দখলের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাবে তেল আবিবের উত্তরের জন্য মধ্যস্থতাকারীরা ৪৮ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করলেও তিনি এই নির্দেশ দিলেন।

বুধবার রাতে মার্কিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানায়, গাজা শহর দখলের পরিকল্পনা অনুমোদনের আগে তিনি ‘হামাসের শেষ শক্ত ঘাঁটিগুলো নিয়ন্ত্রণে নেওয়া এবং তাদের পরাজিত করার সময়সীমা’ কমিয়ে আনার নির্দেশনা দিয়েছেন।

এর আগে বুধবার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ ‘অপারেশন গিডিয়ন’স চ্যারিয়টস ২’-এর অধীনে গাজা শহর দখলের পরিকল্পনা অনুমোদন করেন। এরপরই দেশটির সেনাবাহিনী ৬০ হাজার সংরক্ষিত সেনাকে তলবের আদেশ পাঠাতে শুরু করে।

এর আগে গত ১৬ মে ‘অপারেশন গিডিয়ন’স চ্যারিয়টস’ নামে গাজা উপত্যকায় অভিযান শুরু করেছিল ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। সাবেক ইসরায়েলি রাজনীতিবিদ ও সামরিক কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন, হামাসকে পরাজিত করা এবং সব জিম্মিকে মুক্ত করার মতো প্রধান লক্ষ্যগুলো অর্জনে ওই অভিযান ব্যর্থ হয়েছে। তবে সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা গাজা উপত্যকার ৭৫ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে।

ইসরায়েলের ইয়েদিওত আহরোনোত পত্রিকা জানিয়েছে, গাজা শহর দখলের পরিকল্পনা অনুমোদনের জন্য বৃহস্পতিবার দেশটির নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। পত্রিকাটি আরও জানায়, ‘এদিকে, গাজায় আটক ইসরায়েলিদের মুক্তির জন্য একটি জিম্মি চুক্তি নিয়ে পর্দার আড়ালে আলোচনা চলছে। হামাস একটি আংশিক চুক্তিতে সম্মত হলেও নেতানিয়াহু সেদিকে কম আগ্রহী, যদিও তিনি আলোচনার দরজা পুরোপুরি বন্ধ করেননি।’

নেতানিয়াহুর দৃষ্টিকোণ থেকে, গাজা শহর দখল করা হলে তা একটি ব্যাপক চুক্তিতে সম্মত হওয়ার জন্য হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টিতে বড় হাতিয়ার হিসেবে কাজ করতে পারে। ইসরায়েলের শর্তগুলো হলো: হামাসের নিরস্ত্রীকরণ, এর নেতাদের নির্বাসন এবং ভবিষ্যতের যেকোনো শাসনব্যবস্থা থেকে এই সংগঠনকে বাদ দেওয়া।

ইসরায়েলের চ্যানেল ফোরটিন জানিয়েছে, বড় ধরনের অভিযানের আগে প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সেনাবাহিনী এরই মধ্যে গাজা শহরের উপকণ্ঠে জাইতুন এলাকা এবং মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে উত্তর গাজার জাবালিয়ায় অভিযান পরিচালনা করছে। চ্যানেলটি আরও জানায়, ‘অপারেশন গিডিয়ন’স চ্যারিয়টস ২’-এর অধীনে সেনাবাহিনী ৯৮তম ডিভিশনকে আবার গাজা উপত্যকায় মোতায়েন করবে, যার ফলে মোট পাঁচটি ডিভিশন অভিযানে অংশ নেবে।

নেতানিয়াহুর এই বক্তব্য এবং গাজা শহর দখলের প্রস্তুতি এমন এক সময়ে এলো, যখন মধ্যস্থতাকারী মিশর, কাতার এবং যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতি ও বন্দী বিনিময়ের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সোমবার হামাসের পক্ষ থেকে গৃহীত একটি নতুন প্রস্তাব ইসরায়েলের কাছে পাঠানো হলেও ৪৮ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে এর কোনো জবাব মেলেনি।

এই প্রস্তাবে যুদ্ধ শেষ করার জন্য একটি ব্যাপক চুক্তির পথ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর আগে ৬০ দিনের জন্য সংঘাত বন্ধ থাকবে, যে সময়ে বেশ কয়েকজন বন্দীর বিনিময় হবে এবং ইসরায়েলি বাহিনী বর্ধিত মানবিক সহায়তার পাশাপাশি গাজা উপত্যকার অভ্যন্তরে পুনর্বিন্যস্ত হবে। তবে নেতানিয়াহু মঙ্গলবার জানিয়েছেন, ‘ইসরায়েলের নীতিতে কোনো পরিবর্তন আসেনি; দেশটি ৫০ জন জিম্মির সকলের মুক্তি চায়।’

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েল গাজায় ৬২,১০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। এই সামরিক অভিযানে পুরো উপত্যকা বিধ্বস্ত হয়েছে এবং সেখানকার মানুষ দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন। গত নভেম্বরে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এছাড়া, গাজায় চালানো এই নৃশংসতার জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও (আইসিজে) গণহত্যার মামলার মুখোমুখি।