ভূখণ্ড ছাড়ার চাপ একটি ফাঁদ, ইউক্রেনকে সতর্ক করল ইইউ

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক প্রধান কাজা কালাস সতর্ক করে বলেছেন, ইউক্রেনকে ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া রাশিয়ার পাতা একটি ‘ফাঁদ’। তিনি মনে করেন, এই ধরনের কোনো পদক্ষেপে আগ্রাসনই পুরস্কৃত হবে।

বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শুক্রবার তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনের কী ছেড়ে দেওয়া উচিত বা তারা কী ধরনের ছাড় দিতে ইচ্ছুক, তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, রাশিয়া এই যুদ্ধ শুরু করেছে এবং তারা এখন পর্যন্ত কোনো ছাড় দেয়নি।’

কালাস আরও বলেন, ‘আমরা যদি এই ফাঁদে পা দিই এবং ইউক্রেনকে ছাড় দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করি, তাহলে এমন ঘটনা আবারও ঘটবে। কারণ, এতে আগ্রাসনই পুরস্কৃত হবে।’

গত সপ্তাহে আলাস্কায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত শীর্ষ বৈঠকের বিষয়ে তিনি মন্তব্য করেন, পুতিন ‘যা যা চেয়েছিলেন, তার সবকিছুই পেয়েছেন।’ তিনি যোগ করেন, ‘পুতিন কেবল হেসেই চলেছেন, হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে বরং আরও বাড়িয়েছেন।’

ইউক্রেনের জন্য ‘বিশ্বাসযোগ্য ও শক্তিশালী’ নিরাপত্তা নিশ্চয়তার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে কালাস স্বীকার করেন যে, আলোচনার এই পর্যায়ে প্রতিরোধক শক্তি হিসেবে বাস্তবসম্মত বা সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপ খুব বেশি নেই। তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চয়তা হলো একটি শক্তিশালী ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী।’ তিনি এমন নিশ্চয়তা প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেন, যা ‘শুধু কাগজের মধ্যে’ সীমাবদ্ধ থাকবে না।

কালাস জানান, ‘ইচ্ছাকৃত জোটে’র সদস্য রাষ্ট্রগুলোই নির্ধারণ করবে তারা ঠিক কী ধরনের সহায়তা প্রদান করতে পারে।

এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার বলেছেন, ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা ‘দুই সপ্তাহের মধ্যে’ স্পষ্ট হবে।

ট্রাম্প ও পুতিনের আলাস্কা শীর্ষ বৈঠকের পর শান্তি আলোচনা এবং নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে আলোচনা জোরদার হয়েছে। এরপর সোমবার হোয়াইট হাউসে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টদের পাশাপাশি ন্যাটো প্রধান ও ইউরোপীয় নেতাদের মধ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সম্ভাব্য শান্তি চুক্তির প্রধান বাধা হিসেবে ভূখণ্ড বিনিময় এবং নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিষয়গুলো উঠে আসছে।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ইউক্রেনের দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন এবং জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চল নিজেদের সঙ্গে সংযুক্ত করে রাশিয়া।

বুধবার রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছেন, ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা সংক্রান্ত আলোচনায় মস্কোকে অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। অন্যদিকে, রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের উপপ্রধান দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেছেন, মস্কো ‘শান্তিরক্ষী’ হিসেবে ইউক্রেনে ন্যাটো সেনাদের উপস্থিতিকে ‘নিরাপত্তা নিশ্চয়তা’ হিসেবে মেনে নেবে না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘এটি স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে: শান্তিরক্ষী হিসেবে কোনো ন্যাটো সেনা নয়। রাশিয়া এই ‘নিরাপত্তা নিশ্চয়তা’ গ্রহণ করবে না।’