পারমাণবিক কর্মসূচি: ইরানকে নিষেধাজ্ঞার হুমকি যুক্তরাজ্যের

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে কূটনৈতিক চুক্তিতে পৌঁছানোর সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে যুক্তরাজ্য। ইউরোপীয় ও মার্কিন মিত্রদের সঙ্গে আলোচনার মধ্যেই ইরানকে এই কঠোর বার্তা দেওয়া হলো।

শুক্রবার যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি জানান, ব্রিটেন কূটনৈতিক সমাধানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকলেও কোনো অগ্রগতি না হলে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। মার্কিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি জানান, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচির সঙ্গে ফোনালাপের মাধ্যমে তিনি ‘ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে উদ্বেগ পুনর্ব্যক্ত’ করেছেন।

ল্যামি বলেন, ‘আমরা কূটনীতিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তবে সময় সংক্ষিপ্ত। আমরা ইরানকে নিষেধাজ্ঞা শিথিলের মেয়াদ বাড়ানোর মাধ্যমে একটি কূটনৈতিক সমাধানের প্রস্তাব দিয়েছি। যাচাইযোগ্য ও টেকসই চুক্তি ছাড়া এটি শেষ হয়ে যাবে।’

যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি (যারা ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির ইউরোপীয় পক্ষ) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান কাজা কালাসও চলতি সপ্তাহের শুরুতে আরাকচির সঙ্গে আলোচনা করেছেন। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ‘স্ন্যাপব্যাক’ ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে চুক্তির লঙ্ঘন হলে তেহরানের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনরায় আরোপ করা যাবে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ইরনার তথ্যমতে, ওই ফোনালাপে স্ন্যাপব্যাক ব্যবস্থা নিয়ে তেহরানের অবস্থান এবং এ বিষয়ে ইউরোপীয় দেশগুলোর দায়িত্ব নিয়েও আলোচনা হয়। আরাকচি যুক্তি দেন, ইউরোপীয় শক্তিগুলো ২০১৫ সালের চুক্তির অধীনে তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং একারণে এই ব্যবস্থা চালুর কোনো ‘আইনি ও নৈতিক’ ভিত্তি তাদের নেই।

২০১৫ সালের জুলাই মাসে ইরান এবং বিশ্বের ছয় শক্তি—যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, রাশিয়া ও জার্মানি—একটি ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষর করে। এর আওতায় ইরানের পারমাণবিক কর্মকাণ্ড সীমিত করার বিনিময়ে দেশটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা শিথিলের প্রস্তাব দেওয়া হয়।

২০১৮ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে এই চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয় এবং তেহরানের ওপর পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর এক বছর পর ইরান তার প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসতে শুরু করে এবং ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ইরানের অভিযোগ, ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলো মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রভাব কমাতে ব্যর্থ হয়েছে।

এরপর থেকে ইউরোপীয় পক্ষগুলো, যারা ‘ই-থ্রি’ নামে পরিচিত, ইরানকে চুক্তিতে না ফিরলে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের জন্য স্ন্যাপব্যাক ব্যবস্থা ব্যবহারের হুমকি দিয়ে আসছে। এটি কার্যকর করার সময়সীমা আগামী ১৮ অক্টোবর শেষ হচ্ছে।

গত মাসে ইস্তাম্বুলে ইরান, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে আলোচনা চালিয়ে যেতে সব পক্ষ সম্মত হয়। তেহরান সতর্ক করেছে, যদি জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করা হয়, তবে দেশটি পারমাণবিক অস্ত্রবিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) থেকে নিজেদের সদস্যপদ প্রত্যাহারের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে পারে। ১৯৭০ সাল থেকে ইরান এই চুক্তির অংশ।