নয়াদিল্লিতে নতুন মার্কিন দূত, রুশ তেল নিয়ে কড়া অবস্থানে ভারত

ভারত যখন রাশিয়ার তেল কেনা ও পরিশোধন করে পুনরায় বিক্রি করা নিয়ে নিজেদের কঠোর অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে, ঠিক সেই উত্তেজনার আবহেই নয়াদিল্লিতে নতুন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সের্গিও গোরকে এই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

শনিবার নয়াদিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্কর সমালোচকদের উদ্দেশে কড়া ভাষায় বলেন, ‘একটি ব্যবসাপন্থী মার্কিন প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জন্য অন্যদের ব্যবসা করা নিয়ে অভিযোগ করাটা বেশ মজার। ভারতের কাছ থেকে তেল বা পরিশোধিত পণ্য কিনতে যদি আপনাদের সমস্যা হয়, তাহলে কিনবেন না। আপনাদের কেউ এটা কিনতে বাধ্য করছে না। ইউরোপ কিনছে, আমেরিকা কিনছে, তাই আপনাদের পছন্দ না হলে কিনবেন না।’

উল্লেখ্য, গত বছর ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য রেকর্ড ৬৮ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এই সময়ে ভারত রাশিয়া থেকে প্রায় ৮ কোটি ৮০ লাখ টন তেল আমদানি করেছে।

এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতে নতুন রাষ্ট্রদূত এবং দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক বিশেষ দূত হিসেবে সের্গিও গোরের নাম ঘোষণা করেছেন। সিনেটের অনুমোদন পাওয়ার আগ পর্যন্ত গোর রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের কর্মীবিষয়ক পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। মার্কিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেছেন, গোর ‘রেকর্ড সময়ে আমাদের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিটি বিভাগে প্রায় ৪,০০০ ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির সমর্থককে নিয়োগের তত্ত্বাবধান করেছেন। আমাদের বিভাগ ও সংস্থাগুলোর ৯৫ শতাংশের বেশি পদ পূর্ণ হয়েছে!’

ট্রাম্প আরও বলেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল অঞ্চলের জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ যে আমার এমন একজন ব্যক্তি আছেন, যাকে আমি আমার কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারি এবং যিনি আমাদের ‘আমেরিকাকে আবার মহান করার’ ক্ষেত্রে সাহায্য করবেন। সের্গিও একজন অসাধারণ রাষ্ট্রদূত হবেন।’

সোভিয়েত ইউনিয়নে জন্মগ্রহণকারী গোরের পুরো নাম গোরোখোভস্কি। ইলন মাস্ক তাকে ‘সাপ’ বলে অভিহিত করলে সম্প্রতি তিনি আলোচনায় আসেন। গুঞ্জন রয়েছে, তিনি নিজের নিরাপত্তা ছাড়পত্র যাচাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেননি।

এই নিয়োগ এমন এক সময়ে এলো, যখন ওয়াশিংটনের সঙ্গে ভারতের শুল্ক বিরোধ চলছে। ইউক্রেনে যুদ্ধ চালানো থেকে রাশিয়াকে বিরত রাখার প্রচেষ্টা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় রপ্তানিতে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল।

অন্যদিকে, সোমবার থেকে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে চিঠি, নথি এবং ১০০ ডলার পর্যন্ত মূল্যের উপহার সামগ্রী ছাড়া সব ধরনের ডাকযোগে পাঠানো পণ্য বুকিং সাময়িকভাবে স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে ভারতের ডাক বিভাগ। ওয়াশিংটনের একটি বিশেষ ছাড় বাতিলের সিদ্ধান্তের আগে এই পদক্ষেপ নেওয়া হলো। শুক্রবার থেকে নতুন নিয়ম কার্যকর হওয়ার কথা, যার ফলে ৮০০ ডলার বা তার কম মূল্যের পার্সেল শুল্ক ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবে না।

জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। তবে ভারতের অলঙ্ঘনীয় সীমার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের উদ্বেগের বিষয় হলো আমাদের কৃষক এবং ক্ষুদ্র উৎপাদকদের স্বার্থ। এসব বিষয়ে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।’