সহকর্মীদের মৃত্যুতে নীরব কেন, সাংবাদিকদের প্রশ্ন জাতিসংঘের দূতের

গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় সাংবাদিকরা নিহত হওয়ার ঘটনায় নীরব থাকায় অন্য সাংবাদিকদের তীব্র সমালোচনা করেছেন অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত ফ্রান্সেসকা আলবানিজ।

সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘যেসব সাংবাদিক গণহত্যার তথ্য সংগ্রহ করার সময় তাদের সাহসী ফিলিস্তিনি সহকর্মীদের হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন না, তাদের জন্য লজ্জা’।

তিনি হামলায় উদ্ধার হওয়া একটি ক্যামেরার ছবি পোস্ট করে বলেন, মূল পোস্টে ক্যামেরাটিকে ‘ইসরায়েলের সবচেয়ে ভয়ের অস্ত্র’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আলবানিজ আরও বলেন, এই ক্যামেরাটি একদিন ‘গণহত্যা স্মৃতিসৌধে’ প্রদর্শন করা উচিত। এটি গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার শিকার অগণিত মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবে।

চিকিৎসকদের তথ্যমতে, সোমবার গাজা উপত্যকাজুড়ে ইসরায়েলের নতুন হামলায় ছয়জন সাংবাদিকসহ অন্তত ৪৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় আরও বহু মানুষ আহত হয়েছেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সে ইসরায়েলি হামলায় পাঁচ সাংবাদিক ও একজন অগ্নিনির্বাপক কর্মীসহ ২০ জন নিহত হয়েছেন। মন্ত্রণালয় আরও জানায়, ইসরায়েলি বাহিনী কমপ্লেক্সের একটি ভবনের চতুর্থ তলায় দুটি বিমান হামলা চালায়। দ্বিতীয় হামলাটি চালানো হয় যখন উদ্ধারকারী দল আহতদের উদ্ধার এবং নিহতদের মরদেহ সরানোর জন্য ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।

এই নৃশংস হামলায় নিহতদের মধ্যে রয়টার্স সংবাদ সংস্থার ফটোসাংবাদিক হুসাম আল-মাসরি রয়েছেন। কাতারের টেলিভিশন চ্যানেল আল জাজিরা তাদের আলোকচিত্রী মোহাম্মদ সালামার মৃত্যু নিশ্চিত করেছে। একটি চিকিৎসা সূত্র আনাদোলুকে ফটোসাংবাদিক মারيام আবু দাগ্গার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। হাসপাতালটিতে ইসরায়েলি হামলায় ফটোসাংবাদিক মোয়াজ আবু তাহাও নিহত হন। এছাড়া, তিউনিসিয়া ও মরক্কোর সংবাদমাধ্যমের জন্য কাজ করা ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক আহমেদ আবু আজিজও ইসরায়েলি হামলায় আহত হওয়ার পর মারা গেছেন বলে চিকিৎসা সূত্র জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৬২,৭০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এই সামরিক অভিযানে পুরো উপত্যকা বিধ্বস্ত হয়েছে এবং সেখানকার বাসিন্দারা দুর্ভিক্ষের মুখে পড়েছেন।

গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এছাড়া, গাজায় চালানো যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও (আইসিজে) গণহত্যার মামলার সম্মুখীন।