মার্কিন দূত: হিজবুল্লাহ অস্ত্র ছাড়লে সেনা সরাবে ইসরায়েল

যুক্তরাষ্ট্রের সিরিয়া বিষয়ক বিশেষ দূত টম ব্যারাক জানিয়েছেন, হিজবুল্লাহ তাদের অস্ত্র পরিত্যাগ করলে ইসরায়েল দক্ষিণ লেবানন থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে সম্মত হয়েছে। মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউনের সঙ্গে বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই তথ্য জানান।

মার্কিন দূত বলেন, ‘হিজবুল্লাহ যেভাবে ধাপে ধাপে নিরস্ত্রীকরণ করবে, ইসরায়েলও একইভাবে সেনা প্রত্যাহার করবে।’ তিনি আরও জানান, আগামী ৩১ আগস্ট লেবানন সরকার হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করতে রাজি করানোর জন্য একটি পরিকল্পনা উপস্থাপন করবে। তিনি লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন, প্রধানমন্ত্রী নওয়াফ সালাম এবং পার্লামেন্ট স্পিকার নাবিহ বেরির নেতৃত্বে শান্তি ও সহনশীলতার এক নতুন যুগে প্রবেশের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন।

এর আগে গত ৫ আগস্ট লেবানন সরকার একটি প্রস্তাব অনুমোদন করে, যেখানে দেশের সব অস্ত্র রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য সরকারকে চলতি মাসের মধ্যে একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে এবং ২০২৫ সালের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে হিজবুল্লাহ এই সিদ্ধান্তকে ‘গুরুতর ভুল’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।

উল্লেখ্য, ইসরায়েল ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর লেবাননে সামরিক অভিযান শুরু করে, যা ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে রূপ নেয়। এই যুদ্ধে চার হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং প্রায় ১৭ হাজার মানুষ আহত হয়। গত বছরের নভেম্বরে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও ইসরায়েলি বাহিনী প্রায় প্রতিদিনই দক্ষিণ লেবাননে আক্রমণ চালিয়ে আসছে। তাদের দাবি, তারা হিজবুল্লাহর বিভিন্ন কার্যক্রমকে লক্ষ্য করেই এই আক্রমণ চালাচ্ছে।

যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী, ইসরায়েলের ২৬ জানুয়ারির মধ্যে দক্ষিণ লেবানন থেকে সম্পূর্ণভাবে সেনা প্রত্যাহার করার কথা ছিল। কিন্তু তেল আবিব সেই সময়সীমা মানতে অস্বীকৃতি জানালে তা ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তা সত্ত্বেও, এখনও সীমান্তের অন্তত পাঁচটি অবস্থানে ইসরায়েলি সেনা মোতায়েন রয়েছে।

মার্কিন দূত টম ব্যারাক আরও বলেন, ওয়াশিংটন দক্ষিণ লেবাননে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী ইউনিফিলের কার্যক্রম জাতিসংঘের মাধ্যমে আরও এক বছরের জন্য বাড়ানোর পক্ষে কাজ করবে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ১৭০১ নম্বর প্রস্তাবের অধীনে এই বাহিনী দক্ষিণ লেবাননে কাজ করে আসছে, যার মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩১ আগস্ট শেষ হবে।

সিরিয়া-লেবানন সম্পর্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমদ আল-শারা লেবাননের সঙ্গে কোনো বৈরী সম্পর্ক চান না। তিনি দুই দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক সহযোগিতার সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠায় আগ্রহী এবং লেবাননের সঙ্গে সীমান্ত সারিবদ্ধকরণ চুক্তির জন্য আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। দুই দেশের মধ্যে ৩৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত থাকলেও ভূমির জটিল অবস্থানের কারণে অনেক এলাকা এখনও সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা যায়নি।