দিনের শেষে আবারও এক হবে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র!

যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ শতাংশ বাণিজ্য শুল্ক কার্যকরের পর ভারত-মার্কিন সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে ভারতের পোশাক, গয়না, সি-ফুড ও চামড়াজাত পণ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি খাতগুলো বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। গত ২৭ আগস্ট থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপ করা এই নতুন শুল্ক কার্যকর হয়।

রাশিয়া থেকে ভারতের তেল কেনাকে এই শুল্ক আরোপের অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসন বিষয়টিকে ‘জরিমানা’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। যদিও এর পেছনে মার্কিন কৃষি ও দুগ্ধজাত পণ্যের জন্য ভারতের বাজার উন্মুক্ত করার মতো অমীমাংসিত বিষয়গুলোও বড় ভূমিকা রেখেছে। এসব বিরোধের কারণে গত ২৫ আগস্ট দুই দেশের মধ্যে নির্ধারিত আলোচনাও অনুষ্ঠিত হয়নি।

এসব টানাপোড়েনের মধ্যেও আলোচনার দরজা খোলা রয়েছে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট সম্প্রতি ‘ফক্স নিউজ’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ‘অত্যন্ত জটিল’ হলেও তিনি আশাবাদী যে ‘দিনের শেষে আমরা এক হব।’ তিনি মনে করিয়ে দেন, বাণিজ্য ঘাটতিতে থাকা দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে এবং উদ্বৃত্ত দেশেরই বিষয়টি নিয়ে ভাবা উচিত। বেসেন্ট জানান, মার্কিন কোম্পানিগুলোর জন্য বাজার খুলে দিতে ভারতের ‘অনিচ্ছা’ এবং রাশিয়ার সঙ্গে তেল বাণিজ্য অব্যাহত রাখায় সমঝোতা প্রক্রিয়া ধীর হয়ে পড়েছে।

অন্যদিকে, ভারতও তার অবস্থানে অনড়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, দেশের কৃষক, ক্ষুদ্র শিল্প ও গবাদি পশুর স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে কোনো আপস করা হবে না। রাশিয়ার তেল কেনা নিয়ে সমালোচনার জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্করও কড়া ভাষায় বলেছেন, ‘যদি আপনাদের কোনো সমস্যা থাকে, তাহলে আমাদের কাছ থেকে কিনবেন না।’

এই বাণিজ্য লড়াইয়ের অর্থনৈতিক প্রভাব ভারতের জন্য উদ্বেগজনক। অর্থনৈতিক থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক জিটিআরআই-এর মতে, নতুন শুল্ক ভারতের ৬৬ শতাংশ রপ্তানিকে প্রভাবিত করতে পারে। পোশাক ও গহনা শিল্পে এর মধ্যেই এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে, অনেক মার্কিন অর্ডার বাতিল বা স্থগিত করা হয়েছে। অ্যাপারেল এক্সপোর্ট প্রমোশন কাউন্সিল জানিয়েছে, এই শিল্প সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, মার্কিন বাজারে ভারতীয় পণ্যের দাম বাড়ায় বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার মতো প্রতিযোগী দেশগুলো বাড়তি সুবিধা পাবে।

উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভারত বিকল্প পথের সন্ধান করছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রায় ৪০টি দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করে বস্ত্র রপ্তানির নতুন বাজার তৈরির পরিকল্পনা করছে। একইসঙ্গে অভ্যন্তরীণ বাজার শক্তিশালী করার দিকেও নজর দেওয়া হচ্ছে।

ভারতীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আলোচনার পথ এখনো খোলা আছে এবং পরিস্থিতি যতটা খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছিল, ততটা হয়তো হবে না। দুই দেশই যেহেতু নিজ নিজ স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে, তাই একটি সফল আলোচনার জন্য উভয় পক্ষকে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা দেখাতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।