ইসরায়েলি হামলায় হুতি প্রধানমন্ত্রী নিহত, দাবি সংবাদমাধ্যমের

ইয়েমেনের রাজধানী সানায় এক বিমান হামলায় ইরান-সমর্থিত হুতি গোষ্ঠীর প্রধানমন্ত্রী নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার ইসরায়েল এই হামলাটি চালায়। ইয়েমেনের আল-জুমহুরিয়া চ্যানেল ও আডেন আল-ঘাদ সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটি অ্যাপার্টমেন্টে ইসরায়েলি হামলায় হুতি প্রধানমন্ত্রী আহমেদ আল-রাহাওয়ি নিহত হয়েছেন।

আডেন আল-ঘাদের প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, তার সঙ্গে থাকা বেশ কয়েকজন সহযোগীও এই হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন। তবে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে এ খবরের সত্যতা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করা হয়নি।

প্রতিবেদনগুলো থেকে জানা যায়, এটি বৃহস্পতিবারের একটি পৃথক হামলা ছিল। এর আগে রাজধানীর বাইরে হুতি নেতা আব্দুল মালিক আল-হুতির বক্তৃতা শোনার জন্য সমবেত হওয়া দশজন জ্যেষ্ঠ হুতি মন্ত্রীর ওপরও হামলা চালানো হয়েছিল। সেই হামলার ফলাফল এখনও পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে ইসরায়েলের চ্যানেল থার্টিন নিউজ বৃহস্পতিবার রাজনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে দাবি করেছে, ‘মূল্যায়নের দিকটি ইতিবাচক এবং হামলাটি সফল হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে’। একইসঙ্গে ওয়াইনেট-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘হামলায় হুতিদের পুরো সামরিক ও সরকারি শীর্ষ নেতৃত্ব নির্মূল হয়েছে বলে ধারণা জোরালো হচ্ছে’।

বিভিন্ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ইসরায়েলি গোয়েন্দারা ওই সমাবেশের বিষয়ে তাৎক্ষণিক তথ্য সরবরাহ করে, যার ভিত্তিতে হামলাটি চালানো সম্ভব হয়। ওই এলাকায় শক্তিশালী বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও হামলাটি সফলভাবে কার্যকর করা হয়েছে। আরও জানা যায়, আব্দুল মালিক আল-হুতির বক্তৃতা চলাকালে ইসরায়েল পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিল। শীর্ষ কর্মকর্তাদের ওপর হামলার বিষয়টি তিনি আঁচ করতে পেরেছেন কি না, তা বোঝার জন্যই এই পর্যবেক্ষণ করা হয়। তবে তার বক্তব্যে তেমন কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।

হামলার লক্ষ্যবস্তুতে হুতিদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এবং সামরিক বাহিনীর চিফ অব স্টাফও ছিলেন। চ্যানেল টুয়েলভ-এর তথ্য অনুযায়ী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মুহাম্মদ নাসের আল-আতাফি ২০১৬ সাল থেকে এই পদে রয়েছেন এবং তাকে সংগঠনের সামরিক কাঠামোতে সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি ইরানের বিপ্লবী রক্ষীবাহিনী এবং হিজবুল্লাহর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযানে সরাসরি জড়িত ছিলেন বলে জানা যায়।

এছাড়া, হুতিদের চিফ অব স্টাফ মুহাম্মদ আল-ঘামারিও লক্ষ্যবস্তু ছিলেন। এর আগে জুনে ইয়েমেনে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলার সময় ইসরায়েলি হামলায় তিনি গুরুতর আহত হয়েছিলেন, তবে সেবার তিনি বেঁচে যান।

বৃহস্পতিবার চ্যানেল টুয়েলভ-কে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, ইসরায়েল রবিবার সানায় একটি ভিন্ন হামলার অংশ হিসেবে হুতি নেতৃত্বকে লক্ষ্যবস্তু করার জন্য প্রস্তুত ছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করে।

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা এই হামলাকে অত্যন্ত নাটকীয় বলে বর্ণনা করেছেন। যদিও চলমান যুদ্ধে ইয়েমেনে ইসরায়েলের পূর্ববর্তী হামলাগুলো হুতিদের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থামাতে ব্যর্থ হয়েছিল। আগের হামলাগুলো সাধারণত অবকাঠামোকে লক্ষ্য করে চালানো হতো, সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট কর্মকর্তাদের ওপর নয়।

হুতি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র এই হামলায় তাদের কোনো সদস্যের হতাহতের খবর অস্বীকার করেছে। তারা জোর দিয়ে বলেছে, ‘গাজার সমর্থনে অবস্থান নেওয়ার কারণে ইসরায়েল বেসামরিক লক্ষ্যবস্তু ও ইয়েমেনের জনগণের ওপর হামলা চালাচ্ছে’।

বৃহস্পতিবারের এই হামলা ছিল প্রায় ১,৮০০ কিলোমিটার (১,১০০ মাইল) দূরে অবস্থিত ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত বিদ্রোহী গোষ্ঠীটির ওপর ইসরায়েলের ১৬তম আক্রমণ।

দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার এক মাস পর, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে হুতিরা ইসরায়েল ও বাণিজ্যিক জাহাজের ওপর হামলা শুরু করে। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হলে হুতিরা হামলা বন্ধ করে। সেই সময়ের মধ্যে তারা ইসরায়েলের দিকে ৪০টিরও বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং কয়েক ডজন আক্রমণকারী ড্রোন ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এর মধ্যে জুলাই মাসে তেল আবিবে একটি হামলায় একজন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হন, যার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল ইয়েমেনে প্রথম হামলা চালায়।

গত ১৮ মার্চ গাজা উপত্যকায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) পুনরায় অভিযান শুরু করার পর থেকে ইয়েমেনের হুতিরা ইসরায়েলের দিকে ৭২টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং অন্তত ২৩টি ড্রোন নিক্ষেপ করেছে।

হুতিদের হামলার জবাবে ইসরায়েল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন একটি জোট ইয়েমেনের বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে বোমাবর্ষণ করে, যার মধ্যে সানা এবং কৌশলগত উপকূলীয় শহর হোদেইদাও রয়েছে। মে মাসে ইসরায়েলি হামলায় সানা বিমানবন্দরটি অকেজো হয়ে পড়ে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন মে মাসে নৌপথে হামলা বন্ধ করার বিনিময়ে বিমান হামলা বন্ধ করতে হুতিদের সঙ্গে একটি চুক্তির ঘোষণা দেয়। তবে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি জানায়, চুক্তিতে ইসরায়েলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে মনে করা লক্ষ্যবস্তুতে হামলা বন্ধ করার কোনো বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল না।