ফের জোড়া ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল আফগানিস্তান, নিহত বেড়ে ২২০০

ভয়াবহ ভূমিকম্পে কয়েকটি গ্রাম বিধ্বস্ত হওয়ার মাত্র কয়েকদিনের মাথায় আফগানিস্তানে আবারও জোড়া ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। গত সপ্তাহের বিধ্বংসী ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা এরই মধ্যে দুই হাজার ২০০ ছাড়িয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। নতুন এই কম্পন চলমান উদ্ধারকাজে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে এবং স্থানীয়দের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে।

এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের খবরে বলা হয়, বৃহস্পতিবার আফগানিস্তানে ছয় দশমিক দুই মাত্রার একটি ভূমিকম্পের কয়েক ঘণ্টা পর চার দশমিক এক মাত্রার আরেকটি কম্পন অনুভূত হয়।

ভারতের ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজির তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ৫৮ মিনিটে আফগানিস্তানে চার দশমিক এক মাত্রার ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার গভীরে। এর কয়েক ঘণ্টা আগে জার্মানির গবেষণা সংস্থা জার্মান রিসার্চ সেন্টার ফর জিওসায়েন্সেস (জিএফজেড) জানায়, আফগানিস্তানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ছয় দশমিক দুই মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে, যার গভীরতা ছিল মাত্র ১০ কিলোমিটার।

নানগারহার প্রদেশের স্বাস্থ্য বিভাগের মুখপাত্র নাকিবুল্লাহ রাহিমি জানান, ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল পাকিস্তান সীমান্তঘেঁষা প্রত্যন্ত শিওয়া জেলায়। প্রাথমিকভাবে বারকাশকোট এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেলেও বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে।

গত রোববার আঘাত হানা ছয় মাত্রার ভূমিকম্পটি ছিল আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক ইতিহাসের অন্যতম মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এতে কুনার ও নানগারহার প্রদেশ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর মঙ্গলবার পাঁচ দশমিক পাঁচ মাত্রার আরও একটি কম্পন ঘটলে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং উদ্ধারকাজে ব্যাঘাত ঘটে। পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় উদ্ধারকাজ কঠিন হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ছয় হাজার ৭০০টিরও বেশি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। জাতিসংঘ আশঙ্কা প্রকাশ করে জানিয়েছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও বহু মানুষ আটকে রয়েছেন এবং তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষীণ হয়ে আসছে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক দাতব্য সংস্থা ইসলামিক রিলিফ ওয়ার্ল্ডওয়াইড জানিয়েছে, কুনার প্রদেশের কিছু এলাকায় দুই-তৃতীয়াংশ বাসিন্দা নিহত বা আহত হয়েছেন এবং ৯৮ শতাংশ ভবন সম্পূর্ণ ধ্বংস বা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বেঁচে যাওয়া মানুষজন এখনও খালি হাতে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে নিখোঁজ স্বজনদের খুঁজছেন। সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, সাহায্যবাহী ট্রাক দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। কিছু এলাকায় হেলিকপ্টার নামানো সম্ভব না হওয়ায় কর্তৃপক্ষ আকাশ থেকে কমান্ডো ইউনিট নামিয়ে দিয়েছে।

উল্লেখ্য, আফগানিস্তান প্রাকৃতিকভাবেই একটি ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ। হিন্দুকুশ পর্বত অঞ্চলে ভারতীয় ও ইউরেশীয় টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষের কারণে এ অঞ্চলে প্রায়ই বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানে।