বাংলাদেশি পাসপোর্ট-এনআইডি: টিউলিপ সিদ্দিকের অস্বীকার ও যুক্তরাজ্যে তোলপাড়
- Details
- by ২৪ ডেস্ক
যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের বাংলাদেশি পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) থাকার তথ্য প্রকাশের পর ব্রিটিশ রাজনীতিতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের দৈনিক প্রথম আলো ও ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টাইমসের যৌথ অনুসন্ধানে এই তথ্য সামনে আসে, যা টিউলিপ সিদ্দিকের আগের বক্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তবে টিউলিপ সিদ্দিক এসব অভিযোগ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর জন্য ‘ভুয়া’ কাগজপত্র তৈরি করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দ্য টেলিগ্রাফে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে টিউলিপের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ প্রায় এক বছর ধরে টিউলিপের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার চালাচ্ছে। এবার তারা এমন কাগজপত্র জাল করেছে, যা পুরোপুরি ভুয়া এবং এতে জালিয়াতির সব লক্ষণ স্পষ্ট।’ তিনি আরও জানান, বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ তাদের দাবির সপক্ষে কোনো প্রমাণ দেয়নি এবং টিউলিপের আইনজীবীদের সঙ্গেও কথা বলতে রাজি হয়নি।
অনুসন্ধানী প্রতিবেদন অনুযায়ী, টিউলিপ সিদ্দিক ২০০১ সালে ১৯ বছর বয়সে একটি বাংলাদেশি পাসপোর্ট পান এবং ২০১১ সালে তার নামে একটি জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ইস্যু হয়। এমনকি ওই বছর তিনি ঢাকার আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্ট নবায়নের জন্য আবেদন করেছিলেন বলেও নথিতে উল্লেখ রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, তার একটি ভোটার নম্বরও রয়েছে।
তবে টিউলিপের সহযোগীরা এসব নথির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলছেন, নথিতে টিউলিপের ঢাকার যে বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি তার খালা ও বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। কিন্তু টিউলিপ কখনো ঢাকায় বসবাস করেননি। তারা আরও দাবি করেন, টিউলিপের নামে থাকা এনআইডি কার্ডটি পুরোনো সংস্করণের, নতুন ‘স্মার্ট কার্ড’ নয়, যা সহজেই যাচাই করা যেত। তাদের মতে, টিউলিপের শৈশবে একটি পাসপোর্ট থাকলেও পরে তিনি আর কোনো বাংলাদেশি পাসপোর্ট বা এনআইডি নেননি।
এই বিতর্ক এমন এক সময়ে সামনে এসেছে, যখন বাংলাদেশে একটি দুর্নীতি মামলায় টিউলিপের অনুপস্থিতিতে বিচার চলছে। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, তিনি তার খালা শেখ হাসিনাকে প্রভাবিত করে মা, ভাই ও বোনের জন্য প্লট বরাদ্দ নিয়েছিলেন। টিউলিপ এই মামলাকে ‘হাস্যকর’ এবং ‘রাজনৈতিক প্রতিশোধমূলক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তবে বাংলাদেশের প্রসিকিউটররা জানিয়েছেন, টিউলিপ কখনো তার নাগরিকত্ব ত্যাগ করেননি।
এই ঘটনায় যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলোও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। দ্য ডেইলি মেইল শিরোনাম করেছে, ‘দুর্নীতির তদন্তের মুখোমুখি লেবার দলের এমপি টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশের পাসপোর্ট থাকার বিষয়ে মিথ্যা বলেছিলেন।’ অন্যদিকে, ব্রিটিশ দৈনিক এক্সপ্রেস এই পরিস্থিতিকে লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমারের জন্য ‘নতুন দুঃস্বপ্ন’ বলে উল্লেখ করেছে। এর আগে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর প্রধানমন্ত্রীর নীতিনৈতিকতাবিষয়ক উপদেষ্টার পরামর্শে টিউলিপ লেবার সরকারের দুর্নীতি প্রতিরোধবিষয়ক মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন।
টিউলিপ সিদ্দিকের নাগরিকত্ব নিয়ে তার আগের বিভিন্ন বক্তব্যও নতুন করে আলোচনায় এসেছে। ২০১৭ সালে এক সাংবাদিককে তিনি বলেছিলেন, ‘আপনি কি আমাকে বাংলাদেশি বলছেন? আমি ব্রিটিশ, সাবধানে বলুন, আমি ব্রিটিশ এমপি...আমি বাংলাদেশি নই।’ আবার ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সফরে গিয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে তিনি বাংলাদেশকে ‘তার দেশ’ বলে উল্লেখ করেছিলেন।
এই ঘটনায় যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ মনে করছেন, টিউলিপ জনগণকে বিভ্রান্ত করেছেন, আবার অনেকে এটিকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেখছেন। লেবার পার্টির টাওয়ার হ্যামলেটস শাখার সাবেক উপদেষ্টা সৈয়দ মনসুর উদ্দিন বলেছেন, ‘প্রতিবেদনটি যদি সত্যি হয়, তবে এটি তার জন্য এবং দলের জন্য বিব্রতকর। রাজনীতিবিদদের সব সময় স্বচ্ছ থাকা উচিত।’ বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বিতর্ক টিউলিপের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে এবং লেবার পার্টির ওপরও চাপ বাড়তে পারে।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.