বিশ্ব ব্যাংকের গবেষণা: বাংলাদেশে বছরে ৩৪% খাদ্য অপচয় হয়

বাংলাদেশে প্রতিবছর উৎপাদিত খাদ্যের প্রায় ৩৪ শতাংশ অপচয় হয়, যার ফলে অর্থনৈতিক, পরিবেশগত ও সামাজিক ক্ষেত্রে ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে। সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় আয়োজিত এক জাতীয় সম্মেলনে বিশ্ব ব্যাংকের এক গবেষণায় এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।

গবেষণায় বলা হয়েছে, বছরে যে পরিমাণ খাদ্য অপচয় হয় তা উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত জমির পরিমাণ প্রায় ৩৪ হাজার বর্গকিলোমিটার। যা দেশের মোট আবাদি জমির ২৭ শতাংশের সমান। এসব অপচয়ের অর্থনৈতিক ক্ষতি দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ৪ শতাংশের সমতুল্য।

বিশ্ব ব্যাংকের সিনিয়র কৃষি বিশেষজ্ঞ সন থান ভো গবেষণা উপস্থাপনকালে বলেন, খাদ্য অপচয় ও ক্ষতি (এফএলডব্লিউ) বাংলাদেশের মোট গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের প্রায় ১৩ শতাংশের জন্য দায়ী, যা প্রায় ২ কোটি ৯০ লাখ টন কার্বন ডাই অক্সাইড সমপরিমাণ।

অন্যদিকে, দেশে এখনো ৩১ শতাংশ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে এবং ৬৬ শতাংশ মানুষ স্বাস্থ্যকর খাবার কেনার সামর্থ্য রাখে না। ফলে প্রাচুর্যের মাঝেও খাদ্য সংকটের বৈপরীত্য স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, খাদ্যের বড় অংশ নষ্ট হচ্ছে উৎপাদন, পরিবহন, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ ও সরবরাহ পর্যায়ে। খুচরা বাজার ও ভোক্তা পর্যায়ে অপচয়ের হার সবচেয়ে বেশি।

কিছু প্রধান খাদ্যশস্যের নিট ক্ষতির হার হলো- চাল: ২৩%, মসুর ডাল: ২৭%, মাছ: ৩৬% এবং আম: ২৯%। এছাড়া শাকসবজি ও ফলের ক্ষেত্রেও ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য।

এফএওর উপ-প্রতিনিধি দিয়া সানু জানান, ধানের ক্ষতি (কাটা ও কাটার আগে) ২৩–২৮%, গমের পরবর্তী ক্ষতি ১৭.৬%। শাকসবজির মধ্যে আমের ক্ষতি ৩১.৭%, কলার ১৯.৯%, আলুর ২১.৮%, গাজরের ২৬.৮%, টমেটোর ২৭.৯% এবং লাল শাকের ১৬.৯%। টমেটোতে মাঠ পর্যায়েও ১০% পর্যন্ত ক্ষতি হয়।

অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, বাংলাদেশের মোট আহরিত মাছের প্রায় ৩০% নষ্ট হয়ে যায়। এর প্রধান কারণ অবৈধ জাল ব্যবহার ও নির্বিচার মাছ ধরা।

তিনি বলেন, অবৈধ জাল ব্যবহার করে সবকিছু ধরা হয়, কিন্তু পছন্দের মাছ বাদ দিয়ে বাকি অংশ ফেলে দেওয়া হয়। ফলে প্রতিটি নৌকার দুই-তৃতীয়াংশ মাছ অপচয় হয়, যা জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভয়াবহ ক্ষতি করছে।

ফরিদা আখতার আরও বলেন, দেশের ১৬% মানুষ এপ্রিলে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিল। কৃষকরা উৎপাদন করলেও ন্যায্য দাম ও সংরক্ষণের অভাবে তারা চাষ থেকে সরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, খাদ্য ক্ষতি ও অপচয় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের বড় অন্তরায়।

তিনি বলেন, গত পাঁচ দশকে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও বাংলাদেশে অপুষ্টি ও কৃশতাজনিত সমস্যা বিদ্যমান। খাদ্য বণ্টন অসম। তাই খাদ্য ক্ষতি কমানো এখন সময়ের দাবি।

সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত এ সম্মেলনের শিরোনাম ছিল ‘টুওয়ার্ডস জিরো ফুড ওয়েস্ট অ্যান্ড লস: বিল্ডিং এ সাসটেইনেবল ফুড ভ্যালু চেইন ইন বাংলাদেশ’। এটি আয়োজন করে সিপিডি, ডেনমার্ক দূতাবাস, এফএও, বিশ্ব ব্যাংক ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জাতিসংঘ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির বাংলাদেশ উপ-পরিচালক জেসি উড, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ ইমদাদ উল্লাহ মিয়া এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ইয়াসিন।